মহিলা কংগ্রেসের কর্মিসভায় প্রদেশ নেতারা।—নিজস্ব চিত্র।
সারদা কাণ্ড নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যে এই সরকার ৫ বছর টিকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রবিবার শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার তুম্বাজোতে মহিলা কংগ্রেসের কর্মিসভায় যোগ দিতে এসে এ কথা বলেছেন সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যর মতো প্রদেশ নেতৃত্ব। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু বলেন, “এই সরকারের যা পরিস্থিতি তাতে ছেড়ে দে মা পালিয়ে বাঁচি। আমরা বলছি, তা করলে চলবে না। ৫ বছর থাকতে হবে। বাংলার মানুষ দেখতে চায় আপনি কী করবেন।” তা হলে কী নির্ধারিত ৫ বছরের আগেই কোনও অবস্থায় এই সরকার নির্বাচন করতে পারে? সোমেনবাবু বলেন, “সরকার ভেঙে পালানোর সুযোগ তৃণমূল পাবে না। সারদা কাণ্ড নিয়ে এই পরিস্থিতি। আরও অন্যান্য যে সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে, যারা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগের খাতা কেন খোলা হবে না। আসলে সে সব খুললে আর তৃণমূলের অস্তিত্ব থাকবে না। এই সরকার সততার প্রতীক নয়। সারদার প্রতীক। দুর্নীতি এবং দেশদ্রোহিতা এক সঙ্গে দুই অভিযোগই উঠেছে এই সরকারের বিরুদ্ধে।”
মদন মিত্র গ্রেফতারের পর সিবিআই-এর বিরুদ্ধে পথে নেমে মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান বিরোধী কাজ করছেন বলে অভিযোগ তোলেন সোমেন মিত্র। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীকে সংবিধান মেনে শপথ নিতে হয়েছে। সিবিআই-ও সংবিধান স্বীকৃত। অথচ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে পথে নেমে তাদের কাজকর্মকে বস্তুত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। যা সংবিধান বিরোধী। এর পরও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারেন কি না মানুষই তা বিচার করবে। তাঁর কটাক্ষ, “মদন মিত্র গ্রেফতারের পর সংবিধানকে পায়ে মুছে চোরের সমর্থনে মিছিলে পা মেলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথায় যাচ্ছে বাংলা? আর আগে ছোটআঙারিয়া থেকে নন্দীগ্রাম সব ক্ষেত্রেই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্তের দাবি করতেন। এ রাজ্যে প্রতারিতরা নিরাপত্তা পান না। প্রতারকরা সরকারের নিরাপত্তা পাচ্ছে। তাই মা-মাটি-মানুষের সরকার নয়। মানুষ বলছেন এটা মদন-মুকুল-মমতার সরকার।”
সোমেনবাবুর কটাক্ষ, “কুণাল চোর? মদন চোর? বলে মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ জনকে শংসাপত্র দিয়েছিলেন। তাঁদের ৩ জনের ক্ষেত্রে প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গিয়েছে। শংসাপত্র জাল বলে বেরিয়েছে। বাকিদেরটাও সিবিআই বলবে। এর বিরুদ্ধে ধর্না হচ্ছে। রাস্তায় নামা হচ্ছে। কোর্টের এজলাসে লোক ঢুকিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে তাড়ানো হচ্ছে। কারণ একটাই। এই জালে আর কেউ জড়াবেন কি? অন্য কেউ জড়ালে এত আকুল হওয়ার কারণ ঘটত না। নিজের পায়ে বেড়ি পড়ার আশঙ্কা করছেন।”
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে সোমেনবাবু জানান, মানুষ অসহায় ভাবে দেখছে রাজ্য সরকার ফরমান জারি করে নির্দেশ দিচ্ছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং গাধীঁজির ছবির মাঝে থাকবে সারদা কাণ্ডের প্রতিমূর্তি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। মদন মিত্র গ্রেফতারের পরে যিনি ‘নির্লজ্জ, কলঙ্ক’-র নায়িকা। রাজ্যে নিরাপত্তা, বিশেষত মহিলাদের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ প্রতিদিনই মার খাচ্ছে।” টালিগঞ্জ থানার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, যারা পুলিশকে মারছে তাদের পাহারা দিচ্ছে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবরা। সোমেনবাবু বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল, মনিরুল ইসলামরা মুখ্যমন্ত্রীর সভায় আসছেন। একই চেয়ারে বসছেন। তাঁদের পিছনে নির্লজ্জ, বেহায়ার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছেন মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবরা। কাদের কাছে মানুষ বিচার চাইবে। বিচারের দাবিতে কংগ্রেস পথে নামবে।”
মুখ্যমন্ত্রী বহুবার উত্তরবঙ্গে এসেছেন। কিন্তু তাতে উত্তরবঙ্গে কোনও শিল্প হয়েছে কি সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রদীপবাবু। উত্তরবঙ্গে চা শিল্প ধুঁকছে। শ্রমিক অসন্তোষ চরম আকার নিচ্ছে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের তরফে চা শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনায় প্রদীপবাবু বলেন, “স্বচ্ছভারত অভিযান করছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি গাঁধীজির চশমা পড়েছেন। কিন্তু যতই চেষ্টা করুন না কেন গাঁধীজি হতে পারবেন না। তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। চা বিক্রি করতেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু চাওয়ালাদের বাড়ি কী ভাবে হবে, কোথা থেকে টাকা আসবে তা তিনি ভাবেন না। কেন্দ্রে এই সরকার আসার পর ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা চালুর দাবিতে আন্দোলন করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy