ধৃত পাপড়ি সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। — নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলরের ছেলের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক তরুণীকে। অভিযোগ, ওই তরুণী মদের দোকানের লাইসেন্স করিয়ে দেওয়ার নাম করে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুক্রবার রাতে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে পাপড়ি সুলতানা নামে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে বার্নপুরের পুরনিয়া তলাওয়ের বাসিন্দা পাপড়ি। তিনি আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন কাউন্সিলর সরবন সাউয়ের ছেলে লব কুমার সাউকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ জানতে পেরেছে, নিজেকে প্রথমে আসানসোলের জেলা আদালতের আইনজীবী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন পাপড়ি। তার পর লবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে মদের দোকানের লাইসেন্স করে দেওয়ার প্রলোভন দেখান বলেও অভিযোগ। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের আবগারি দফতরের ভুয়ো পোর্টাল তৈরি করে লবের থেকে দফায় দফায় তিনি ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
তদন্তকারীদের দাবি, পাপড়ি ভুয়ো ওকালতনামাও জমা দিয়ে মদের দোকানের লাইসেন্স করে দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা শুরু করেছিলেন। লবের দাবি, গত ৭ মে শেষ বার টাকা নেওয়ার সময় তাঁর সন্দেহ হয়। কিন্তু তার মধ্যেই পাপড়ি গত দু’বছরে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে তাঁর থেকে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে লবের অভিযোগ। লব আবগারি দফতরে গিয়ে জানতে পারেন, যে পোর্টালে তাঁর তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে, তা-ও ভুয়ো। এর পরই লব জুন মাসের শুরুর দিকে আসানসোল দুর্গাপুর-পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ পাপড়িকে ডেকে জেরাও করে। গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় পাপড়ি হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু গত ১৭ জুন সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে পাপড়িকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন বিচারপতি। এই ঘটনায় যে হেতু আবগারি দফরের ভুয়ো পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, তাই ওই দফতরকেও মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। কিন্তু খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না পাপড়ির। শেষ পর্যন্ত তাঁর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ভাঙড় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, পাপড়ি বিবাহবিচ্ছিন্না। তিনি খোরপোশও পান। তাঁর নয় বছরের এক ছেলে আছে। এই প্রতারণা চক্রে আরও দু’জন জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পাপড়ির দিদি মানোয়ারা সুলতানা এবং নবনীত ভারতী নামে আরও এক ব্যক্তি। পাপড়িকে গ্রেফতার করলেও, বাকিদের কোনও খোঁজ নেই। তবে নবনীত ভারতীকে নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। কারণ তাঁর কোনও ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তবে লবের দাবি, নবনীত নিজেকে রাজ্য আবগারি দফতরের আধিকারিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন।
পাপড়ির বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁকে আপাতত পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আসানসোল জেলা আদালতের বিচারক।
(গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তকে ‘আপনি’ সম্বোধনে আপত্তি প্রকাশ করেন কেউ কেউ। কিন্তু আইনের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হননি, এমন অভিযুক্তকে ‘আপনি’ সম্বোধনেরই পক্ষপাতী আনন্দবাজার অনলাইন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy