Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Teacher Recruitment Scam Case

পর্ষদের ‘গোপনীয়’ বিভাগে যেতেন শুধু সভাপতি মানিকই, হাই কোর্টকে জানালেন প্রাক্তন সচিব রত্না

রত্নার দাবি, ওই ‘গোপনীয়’ বিভাগের অঙ্গ ছিল উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) প্রস্তুতকারী সংস্থা। সেই সংস্থার সঙ্গে মানিকের ‘কিসের এত প্রেম’, তা-ও সিবিআইকে জানার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘গোপনীয়’ বিভাগ নিয়ে সিবিআই কেন কিছু জানতে পারছে না?

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘গোপনীয়’ বিভাগ নিয়ে সিবিআই কেন কিছু জানতে পারছে না? — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪১
Share: Save:

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-র উত্তরপত্রে কারচুপি চলত ‘গোপনীয়’ বিভাগে। আর সেই বিভাগে একমাত্র যাতায়াত ছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে সাক্ষ্য দিতে এসে এমন দাবিই করলেন পর্ষদের প্রাক্তন সচিব রত্না ভট্টাচার্য। যা শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, এখনও এ নিয়ে সিবিআই কেন কিছু জানতে পারছে না? রত্নার দাবি, ওই ‘গোপনীয়’ বিভাগের অঙ্গ ছিল উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) প্রস্তুতকারী সংস্থা। সেই সংস্থার সঙ্গে মানিকের ‘কিসের এত প্রেম’, তা-ও সিবিআইকে জানার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ব্যাপারে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের শুনানিতে হাজির ছিলেন রত্না। মানিক যখন পর্ষদের সভাপতি ছিলেন, তখন রত্না পর্ষদের সচিব। বৃহস্পতিবার তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় হাই কোর্টে। আদালতে তাঁর উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, কেন ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশিত হয়নি? নিয়োগ প্রক্রিয়ার পর শূন্যপদ থাকলে ফের প্যানেল তৈরি করা হয়। ২০১৪ সালে নিয়োগের পর শূন্যপদ থাকলেও কেন প্যানেল তৈরি করা হয়নি। জবাবে রত্না বলেন, ‘‘পর্ষদের কনফিডেনশিয়াল সেকশন (গোপনীয় বিভাগ) থেকে আমরা ৮টি প্যানেল পেয়েছিলাম। কিন্তু ওগুলির কোনওটাই অতিরিক্ত প্যানেল নয়। তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এ বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই ‘গোপনীয়’ বিভাগের সঙ্গে একমাত্র তাঁর যোগাযোগ ছিল। এস বসু রায়চৌধুরী কোম্পানির প্রতিনিধি এবং প্রয়াত গৌতম মুখোপাধ্যায় ছিলেন ওই বিভাগের সদস্য।’’ প্রসঙ্গত, উত্তরপত্র তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল এস বসু রায়চৌধুরী কোম্পানিকে। ওই কোম্পানির সঙ্গে মানিকের যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ।

হাই কোর্ট এর পরেই রত্নার কাছে জানতে চায়, ওই কোম্পানি কবে থেকে পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত। জবাবে রত্না বলেন, ‘‘২০১২ সালের পর থেকে।’’ তিনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত হন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। রত্না যোগ দেওয়ার পরেই ওই সংস্থার সঙ্গে লেনদেন শুরু হয় পর্ষদের। এ প্রসঙ্গে হাই কোর্টের প্রশ্ন, ‘‘ওই কোম্পানিকে নিয়োগের জন্য কোনও বোর্ড মিটিং হয়েছিল?’’ জবাবে রত্না জানিয়েছেন, তাঁর এখন মনে নেই। এ-ও বলেন, ‘‘সেই সময় ওই সংস্থার সঙ্গে একমাত্র সভাপতি যোগাযোগ রাখতেন। আর কেউ রাখতেন না। আমি বা ডেপুটি সেক্রেটারি কেউই নয়। যতটা আমি জানি।’’

ওই সংস্থাকে কেন পর্ষদের ‘গোপনীয়’ বিভাগের অঙ্গ বলা হত, সেই প্রশ্নও তুলেছে আদালত। যদিও রত্না জানিয়েছেন, এর জবাব তিনি জানেন না। সাক্ষ্যগ্রহণের শেষে তাঁকে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাকে অনেক কিছু বলতে হবে।’’ রত্না চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি যা জানি, বলতে কোনও অসুবিধা নেই।’’

২০১৭ সালের টেটের উত্তরপত্র নষ্ট করা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় রত্নাকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানতাম। আমাকে এই মর্মে চিঠি লিখে দিতে বলা হয়েছিল।’’ তবে ‘ওএমআর শিট’ নষ্ট করা হয়েছে কি না, বা তাঁর প্রতিলিপি রয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। তাঁর কথায়, ‘‘শুনলাম বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার এক আধিকারিক আদালতে বলেছেন, নষ্ট করা হয়েছে। আমি শুধু লিখে দিয়েছিলাম।’’ আদালত পর্ষদের কাছে ‘ওএমআর শিট’ দেখতে চাইলে পাবে কি না, তা-ও জানাতে পারেননি তিনি। বিচারপতি বলেন, ‘‘একটা ওএমআর শিটে রোল নম্বর লেখা রয়েছে, কিন্তু নির্দিষ্ট গোলাকার বৃত্ত পূরণ করা হয়নি। কম্পিউটার কি এটা পড়তে পারবে?’’ জবাবে রত্না বলেন, ‘‘আমার ধারণা নেই। তবে মনে হয় কম্পিউটার শুধুমাত্র গোল বৃত্তগুলিই বুঝতে পারে।’’

হাই কোর্ট এই বিষয়ে ধমক দিয়েছে সিবিআইকেও। জানিয়েছে, এই ‘গোপনীয়’ বিভাগে যাতায়াত ছিল মানিকের, কেন খুঁজে পেল না সিবিআই। আদালত এ সব জানতে পারছে। সিবিআই কেন পারছে না। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাল চান তো এস বসু রায়চৌধুরী কোম্পানির প্রতি মানিক ভট্টাচার্যের এত কিসের প্রেম, তা খুঁজে বার করুন।’’ ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ‘‘অতিরিক্ত প্যানেলের বিষয়ে মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। সিট থেকে অপসারিত সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক সোমনাথ বিশ্বাস কোনও সরকারি সংস্থায় কাজ করার জন্য উপযুক্ত নন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE