রাজ্যে তখন বাম সরকার। চিকুনগুনিয়া এবং বার্ড ফ্লু-র প্রাদুর্ভাব হতেই রাস্তায় নেমে পড়েছিল বিরোধী দল তৃণমূল। ধর্মতলায় একাধিক বিক্ষোভ সভায় ছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রোগ মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে সরকারের বিদায়ের দাবি পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল!
সেই মমতার সরকারের আমলে এখন ডেঙ্গির দাপট। জেলায় জেলায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি চোখ রাঙানিতে চিকিৎসক এবং বেসরকারি ল্যাব পর্যন্ত ডেঙ্গিকে ডেঙ্গি বলে চিহ্নিত করতে পারছে না বলে বিতর্ক তুঙ্গে। কিন্তু এখন কোথায় বিরোধীরা?
অজস্র মানুষের বিপর্যস্ত অবস্থা এবং সরকারের ঘাটতির হাতে গরম নমুনা পেয়েও তারা কিছু করে উঠতে পারেনি বলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বিরোধী শিবিরেই। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশও দলের অন্দরে উষ্মা প্রকাশ করে বলছেন, কিছুতেই তাঁদের কর্মী বাহিনীকে ময়দানে নামানো যাচ্ছে না। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বা বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী সরকারের ব্যর্থতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে চিঠি পাঠিয়েছেন। কলকাতা পুরসভায় ডিওয়াইএফআই এবং কংগ্রেসের দু’টি বিক্ষোভ হয়েছে। ওই পর্যন্তই! মানুষের দুর্দশায় পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তায় যে তাঁদের দেখা যাচ্ছে না, স্বীকার করে নিচ্ছেন সিপিএম ও কংগ্রেস, দু’দলের নেতৃত্বই।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রোগ মোকাবিলায় সরকারের মনোভাবের কড়া সমালোচনা করে দলের কর্মীদের পাড়ায় পাড়ায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দীপাবলির বার্তা দিতে গিয়েও সুজনবাবু শুক্রবার বলেছেন, ‘‘অন্তত ডেঙ্গি-মুক্ত বাংলা এবং সকলের জন্য ঠিকমতো চিকিৎসার শুভেচ্ছা থাকল!’’ কিন্তু সরকারকে নড়ে বসতে বাধ্য করানোর মতো কিছু তাঁরা করতে পারেননি। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের আক্ষেপ, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর মতো আচরণ আমরা করতে পারতাম না। এই সময়ে হাসপাতালে বিক্ষোভে দেখাতে গেলেও মানুষের অসুবিধা হবে। তা সত্ত্বেও আরও কিছু হয়তো করা যেতো!’’ প্রায় একই সুরে বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘উৎসবের সময়ে মানুষকে যন্ত্রণায় ফেলেছে সরকার। এই অবস্থার কড়া প্রতিবাদ সত্যিই হওয়া দরকার।’’
চোখে পড়ার মতো না হলেও কিছু কাজ অবশ্য বিরোধীরা করছে। এসইউসি-র কর্মীরা পুরসভার বোরো কার্যালয়ে বিক্ষোভ করে দাবিপত্র দিয়েছেন। তাদেরই পরিচালিত সল্টলেকের হাসপাতালে বেশ কিছু ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। এসইউসি-র সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের আহ্বায়ক সজল বিশ্বাস জানাচ্ছেন, তাঁরা ২৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য ভবনে যাওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। বিজেপি-র চিকিৎসক সেলও হাবড়ায় দু’দিনের শিবির করেছে। দেগঙ্গা, বসিরহাট-সহ বেশ কিছু উপদ্রুত এলাকায় সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে এসে বিজেপি-র চিকিৎসক-নেতা সুভাষ সরকার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেউ তো বলেনি, ডেঙ্গির জন্য সরকার দায়ী! তা হলে রোগ স্বীকার করতে অসুবিধা কীসের? অবিলম্বে ডেঙ্গিকে মহামারী ঘোষণা করে যুদ্ধকালীন মোকাবিলায় নামুক রাজ্য সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy