কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাসের একটি অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
মানে-মর্যাদায় একদা দেশের সেরা ছিল ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই কলকাতা এ বার প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেও প্রথম হতে পারল না কেন? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সাম্প্রতিক মান নির্ণয় পরীক্ষায় কলকাতা কেন পিছিয়ে পড়ল, সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছে তারও জবাব চেয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় মূল্যায়নে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সামগ্রিক তালিকায় এ বার প্রথম দশে কলকাতা বা যাদবপুরের ঠাঁই না-হলেও প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রথম হয়েছে যাদবপুর। কলকাতার মান নেমে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী যাদবপুরের সেই সাফল্যের কথা টেনেই প্রশ্ন তুলেছেন, যাদবপুর পারলে কলকাতা পারে না কেন?
ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই পরিষেবার ক্ষেত্রেও যাদবপুরের চেয়ে কলকাতার পিছিয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। কয়েক মাস আগেই ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (নাক)-এর সদস্যেরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই পরিষেবা না-থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। ‘‘যাদবপুর করে ফেলছে। বিদ্যাসাগরও করে ফেলছে। আপনারা কেন করতে পারছেন না,’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে সোমবার সরাসরি প্রশ্ন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
আলিপুর ক্যাম্পাসে এ দিন এক অনুষ্ঠানে পার্থবাবু বলেন, ‘‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে যাওয়ার ধরন দেখে ৩৪ বছরের কথা মনে হচ্ছে। ৩৪ বছরে বাংলা পিছিয়ে গিয়েছিল।’’ স্পষ্টতই তাঁর কটাক্ষ বাম জমানাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে যে-ভাবে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই ভাবে আপনাদেরও কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নেমে যাওয়ার জন্য শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন কাজিয়াকেও দায়ী করে থাকেন শিক্ষাবিদদের অনেকে। এই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জন্য কখনও কলেজ স্ট্রিটে, কখনও আলিপুর ক্যাম্পাসে, কখনও বা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে গোলমাল হচ্ছে। এবং সেই গন্ডগোলের প্রভাব পড়ছে পড়াশোনা আর গবেষণার উপরে। এ দিন সেই বিষয়টির উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘দেখতে হবে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যেন ‘প্লেস অব লার্নিং’ (শিক্ষাস্থল) হয়। সেটা যেন ‘প্লেস অব ডিস্টার্বেন্স’ (গোলমালের জায়গা) না-হয়। এটাই প্রথম কাজ।’’
এ দিন একই সঙ্গে টিএমসিপি ছাত্র সংসদের মধ্যে লাগাতার গোষ্ঠী-কোন্দলের বিষয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভর্তি করানোটাই যেন ছাত্র সংসদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে!’’ ছাত্র সংসদের উদ্দেশে মন্ত্রীর বার্তা, তারা যেন যখন-তখন পোস্টার লাগিয়ে আন্দোলনে বসে না-পড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকদের সম্মান করো। যাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের পায়ের তলা থেকে কার্পেট টেনে নিয়ো না।’’
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিক্সড ডিপোজিট কেলেঙ্কারি নিয়ে বারে বারেই মুখর হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘শুধু টাকা জমিয়ে রাখলে তো চলবে না। ছাত্রছাত্রীদের জন্য খরচ করতে হবে।’’
‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রয়েছে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান যেমন রয়েছে, যেমন আছেন সুচিত্রা-উত্তম, তেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আছে,’’ মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার প্রতিকারের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমে ওঠা হাজারো সমস্যার সমাধান করাটাও জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন নতুন কোনও সমস্যা তৈরি না-করে। সমস্যার জট ছাড়িয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় আবার যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে কলেজে আসনের চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়ার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত বিরক্ত। এই ব্যাপারে বারবার ক্ষোভ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তিতে ছাত্র সংসদের যোগসাজশ আছে এবং রীতিমতো আর্থিক লেনদেনও হয়। এ দিনও সেই ক্ষোভ আর অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন পার্থবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy