Advertisement
২২ মে ২০২৪
partha chattopadhyay

‘কুন্তল কে? চিনি না’, স্কুলে নিয়োগ নিয়েও কোর্ট চত্বরে মুখ খুললেন পার্থ

পার্থ-সহ যে ১৩ জনকে আদালতে হাজির করানো হয়, তাঁদের ১৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। অভিযুক্তদের আর কত দিন হেফাজতে রাখা হবে, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁদের আইনজীবীরা।

image of Partha Chattopadhyay

পার্থের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর নাম জড়ানো হচ্ছে বটে, কিন্তু তিনি তো নিয়োগকর্তা ছিলেন না। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ১৮:৫০
Share: Save:

কে কুন্তল ঘোষ? তাঁকে তিনি চেনেন না। বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে এমন দাবিই করলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে আপাতত তিনি জেলবন্দি। অন্য দিকে, একই কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল। সেই কুন্তল সম্পর্কেই পার্থের দাবি, তিনি কুন্তলকে চেনেন না। পাশাপাশি তাঁর দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর নাম জড়ানো হচ্ছে বটে, কিন্তু তিনি তো নিয়োগকর্তা ছিলেন না।বৃহস্পতিবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পার্থ-সহ নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ১৩ জনের শুনানি ছিল। শুনানিতে সশরীরে হাজিরা দেন পার্থ। আদালত চত্বরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কুন্তল কে? চিনি না।’’ একই সঙ্গে পার্থ দাবি করেছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন হোক বা প্রাইমারি শিক্ষা পর্ষদ— সবই স্বশাসিত সংস্থা। নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে মন্ত্রীর কোনও ক্ষমতা নেই। তিনি যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় কালে রাজ্যে স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিবিআই সেই অভিযোগের তদন্ত করছে। একই সঙ্গে নিয়োগে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। স্কুলে একটি নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালত দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যৌথ ভাবে তদন্তদের নির্দেশও দিয়েছে। ইডির গত বছর গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ। সেই পার্থ বৃহস্পতিবার স্কুলে নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নিয়োগ সংস্থা এসএসসি বা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ— সবটাই স্বাধীন বোর্ড। মন্ত্রী এখানে তো নিয়োগকর্তা নন।’’

পার্থ-সহ যে ১৩ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হয়, তাঁদের আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তবে তার আগে অভিযুক্তদের আর কত দিন হেফাজতে রাখা হবে, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁদের আইনজীবীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আদালতও। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হা এবং আবদুল খালেকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, একটি মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকলে অভিযুক্তদের সঙ্গে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। অভিযুক্ত যে বেঁচে থাকবেন, সেই নিশ্চয়তাও নেই। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘সারদা তদন্ত ১২ বছর ধরে চলে যাচ্ছে। সিবিআই বলছে তদন্ত করছে। আমাদের ক্ষেত্রে যারা অভিযুক্ত, তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ৭০ বছরের বেশি। একটা মামলা ১৪-১৫ বছর ধরে চললে অনেক কিছুই ঘটতে পারে জীবনে। তদন্তই ১৫ বছর ধরে চললে, বিচার হতে হতে মানুষ কি জীবিত থাকবেন!’’ তিনি অভিযোগ করেন, এখনও তদন্তের নথি তাঁরা হাতে পাননি। সঞ্জয় বলেন, ‘‘বিচারপ্রার্থীরাও বিচার পাবেন না। আমরাও বিচার পাব না। কোর্টের কাছে বলতে চাই, রোজই ওরা (সিবিআই) নথির কথা বলে। নতুন অভিযোগ তোলে। আমাদের অসুবিধা, আমরা একটা কাগজও পাচ্ছি না।’’সঞ্জয় জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল আবদুলের চার নম্বর মামলায় ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সিবিআই আদালতে জানিয়েছিলন, যে ‘ইমেজিং’ নেবেন। কিন্তু এখনও সেই কাজ এগোয়নি। এই নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বিচারকও, দাবি সঞ্জয়ের। তিনি বলেন, ‘‘বিচারক তদন্তকারীদের বলেন, ২০ দিন ধরে ল্যাপটপ রেখে দিলেন। অভিযুক্তদের দোষ দিচ্ছেন যে, জামিন পেলে তাঁরা ম্যানিপুলেট করবেন। আপনারা যে ম্যানিপুলেট করে ফেলেননি, কী ভাবে জানব? ডিজিটাল এভিডেন্স নিতে গেলে যে সব প্রোটেকশন নিতে হয়, নেননি।’’নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত চন্দন (রঞ্জন) মণ্ডলের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল কারও টাকা তুলেছেন, প্রমাণ দিতে পারেননি তদন্তকারীরা। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা দেখাতে পারেননি যে, রঞ্জন কারও কাছ থেকে টাকা তুলেছেন বা ভুয়ো নিয়োগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রিমান্ড দিয়ে বলেছে, চন্দন বিপুল টাকা তুলেছেন বাজার থেকে। চাকরির নাম করে। পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জানতে চেয়েছে, চন্দনের থেকে কী নথি বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। ওরা কিছু দেখাতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত চন্দনের বিরুদ্ধে কিছু পায়নি।’’আইনজীবী দিব্যেন্দু আরও বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের রিমান্ড বক্তব্য, চন্দন কিছু লোককে চাকরি দিয়েছেন। যাঁদের চাকরি দিয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি নাকি নেই! সেই প্রার্থীরা চন্দনের মাধ্যমে মিডলম্যান প্রসন্ন বা অন্য কারও কাছে যান। যদিও কোর্ট সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE