Advertisement
১৫ জুন ২০২৪

ট্রেন নেই, যাত্রীরা তাই ‘পাষণ্ড’

ঠাট্টা করে তাঁরা নিজেদের বলেন ‘ডেলি পাষণ্ড’। শিয়ালদহের লোকাল ট্রেনের ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’-দের কথা, ‘‘পাষণ্ড না-হলে এই সব ট্রেনে রোজ যাতায়াত করা যায়!’’

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

ঠাট্টা করে তাঁরা নিজেদের বলেন ‘ডেলি পাষণ্ড’। শিয়ালদহের লোকাল ট্রেনের ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’-দের কথা, ‘‘পাষণ্ড না-হলে এই সব ট্রেনে রোজ যাতায়াত করা যায়!’’

সকাল বা সন্ধ্যার অফিস টাইমে যে ভাবে একে অন্যকে ‘ঠেলে-গুঁতিয়ে-মেরে-মাড়িয়ে’ ট্রেনে পা রাখতে হয়, যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গেই তার তুলনা চলে। মহিলা যাত্রীদের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। সাধারণ ট্রেনে মহিলা কামরা থাকে মাত্র দু’টি। দিনের ব্যস্ত সময়ে তাই প্রাণ হাতে নিয়ে ঝুলতে ঝুলতেই যাতায়াত করতে হয় তাঁদের।

কেন এই অবস্থা? সহজ কারণটা হল, প্রয়োজনের তুলনায় ট্রেন কম। রেলের এক কর্তা জানান, শিয়ালদহ শাখায় চলাচলকারী মোট রেকের সংখ্যা ১০৬। এর মধ্যে ৩৬টি রেক ১২ কামরার। বাকিগুলির বেশির ভাগই ৯ কামরার। কিছু ১০ কামরার। রেকগুলি সব মিলিয়ে ৮৯৮ বার যাতায়াত করে। রেলের হিসাব বলছে, শিয়ালদহ শাখায় দৈনিক যাত্রীর সংখ্যা এখন ২৫ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিটি ট্রেনে গড়ে যাত্রী থাকে প্রায় তিন হাজার। যা সাধারণ ট্রেনের যাত্রী বহনক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ।

কিন্তু এই গড় হিসেব থেকে অফিস টাইমের অবস্থাটা বোঝা যাবে না। রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘দুপুর বা বেশি রাতের দিকে ট্রেন তো তুলনায় ফাঁকাই থাকে। যার অর্থ অফিস টাইমে ট্রেন-পিছু যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। তখন হিসেব নিলে দেখা যাবে যে এক একটি ট্রেন বহনক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি যাত্রী টানছে।’’ আবার রেলের দেওয়া ২৫ লক্ষের হিসেব তো বৈধ যাত্রীর সংখ্যা। এর বাইরে বহু লোক যে বিনা টিকিটে প্রতিদিন যাতায়াত করেন, সেটা নিত্যযাত্রীদের সবারই জানা। ফলে বাস্তবে ব্যস্ত সময়ে ট্রেনের উপরে চাপ থাকে আরও বেশি। লড়াই না-করে তাতে পা-রাখে কার সাধ্যি!

রেল সূত্র বলছে, পুরুষ যাত্রীর থেকে মহিলা যাত্রী যে হেতু তুলনামূলক ভাবে কম, তাই ‘লেডিজ স্পেশাল’-এ ভিড় কিছুটা কম থাকে। চোখের সামনে দিয়ে ‘ফাঁকা’ ট্রেন চলে যেতে দেখে তাই রাগে ফুঁসছেন পুরুষ যাত্রীরা। মহিলারা আবার ভাবছেন, তাঁদের জন্য নির্ধারিত ট্রেনে পুরুষরা উঠলে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সুতরাং সংঘাত অনিবার্য।

এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো। সে দিকে কেন নজর নেই রেল কর্তাদের?

রেল সূত্রে বলা হচ্ছে, বনগাঁ ও মেন লাইনের যা অবস্থা, তাতে নতুন লাইন করা না-হলে ট্রেন বাড়ানো আর সম্ভব নয়। গত দশ বছর ধরেই এমন পরিস্থিতি। কিন্তু নতুন লাইন করার জন্য জমি নেই। পরিস্থিতি আপাতত খানিকটা সামাল দিতে কামরার সংখ্যা ৯ থেকে বাড়িয়ে ১২ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর কাজ চললেও অধিকাংশ ট্রেনে তা চালু করা যায়নি।

কারণ? পূর্ব রেলের কর্তাদের কথায়, ‘‘রেক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে ৩৬টি রেকই বনগাঁ ও মেন লাইনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চালানো হচ্ছে। নতুন রেক পেলেই সব জায়গায় ১২ কামরা দেওয়া হবে।’’ তবে শুধু রেক পেলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা নয়। এক রেলকর্তা জানান, শিয়ালদহ-সহ অনেক স্টেশনেই ১২ কামরার ট্রেন দাঁড়ানোর মতো জায়গা করা যায়নি। অনেক জায়গায় জমির জবরদখলকারীদের জন্য বাড়ানো যায়নি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য। ১২ কামরার ট্রেন চালাতে গেলে আরও যে সব পরিকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, বাকি সেই কাজও।

ফলে ‘পাষণ্ড’ হয়ে থাকাই ভবিতব্য শিয়ালদহ শাখার নিত্যযাত্রীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE