উপড়ে ফেলা হচ্ছে গাছ। রবিবার হলদিয়ার মোহনা মার্কেট এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
শিল্পের কারণে দূষণে জর্জরিত হলদিয়ায় বছরভর গাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু বন্দর আর শিল্প শহরের ‘সৌন্দর্যায়নে’ গাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ উঠল পুরসভার বিরুদ্ধে। হলদিয়া পুরসভার এমন পদক্ষেপ নিয়ে রবিবার বিক্ষোভ দেখালেন হলদিয়ার টাউনশিপ ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। বিক্ষোভের জেরে গাছ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ এ দিন স্থগিত রাখেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টাউনশিপের মোহনা মার্কেট লাগোয়া এলাকায় ২৫-৩০ বছর আগে ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছিল। রবিবার ওই সব গাছ ড্রেজারের সাহায্যে উপড়ে পুরসভার কর্মীরা অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুরসভা নিযুক্ত কর্মীদের আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল। তাঁর দাবি, ‘‘এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমি সহমত হয়ে গাছ উপড়ে ফেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় তৃণমূল পুরবোর্ড দখল করার পর থেকেই হলদিয়ায় প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান শ্যামল আদকের মধ্যে বিরোধ লেগে রয়েছে। সেই বিরোধিতায় আঁচ পড়ল এ বার ছাতিম গাছ কাটায়। এ দিন বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মধ্যে গাছ উপড়ানো নিয়ে মোবাইলে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলে সূত্রের খবর। দেবপ্রসাদবাবু জানিয়েছেন, পুরসভার বোর্ড মিটিং-এ গাছ কাটা নিয়ে কোনও প্রস্তাব পাশ হয়নি। তা সত্ত্বেও কেন এ ভাবে গাছ উপড়ে ফেলা হচ্ছিল তার কারণ জানতে চাইলে পুর কর্তৃপক্ষের সদুত্তর মেলেনি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, টাউনশিপের মোহনা মার্কেট এলাকায় সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। তাই রাস্তার পাশে থাকা ছাতিম গাছ উপড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল। গত শুক্রবার থেকে আচমকা ওই এলাকা থেকে প্রায় তিরিশটি পুরনো ছাতিম গাছ ড্রেজার লাগিয়ে উপড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সুধাংশু সামন্ত বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিনের পুরনো বিশাল আকৃতির গাছ সমূলে উপড়ে ফেলা হলে ওই গাছ আগামী দিনে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই আমরা গাছ কাটতে বাধা দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও দেব।’’
পুর চেয়ারম্যান শ্যামল কুমার আদকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য মোবাইলে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু পরিষেবা সীমার বাইরে থাকায় তাঁরে পাওয়া যায়নি। এসএমএস পাঠানো হলে তারও উত্তর মেলেনি।
জেলা বন দফতরও এ ব্যাপারে নীরব বলে স্থানীয়দের দাবি। যদিও জেলা বন দফতরের আধিকারিক স্বাগতা দাস বলেন, ‘‘এলাকার বাইরে রয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
এমন ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পরিবেশপ্রমীদের প্রশ্ন, বারবার শিল্পশহরে গাছ কাটার ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও প্রশাসন কিংবা বন দফতর কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরিবেশ রক্ষার শপথ কি শুধুই সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে। বাস্তবে তা একেবারেই মূল্যহীন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy