প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি হাসপাতালের বড় অঙ্কের বিলে তাঁদের ফি সামান্য। কিন্তু চিকিৎসার খরচ নিয়ে সমস্যা হলে তাঁদের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। অধিকাংশ চিকিৎসকেরাই এই দাবি করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কমিশনের কর্তারা জানাচ্ছেন, বেসরকারি হাসপাতালের খরচে চিকিৎসকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এর পরেই চিকিৎসক মহলে নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। একাংশ জানাচ্ছেন, সস্তার দাওয়াই খুঁজছে কমিশন। আরেকাংশ আবার মনে করছেন, আসল সমস্যা এড়াতেই ‘সফ্ট টার্গেট’ বেছে নিচ্ছে প্রশাসন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমিশনের কর্তারা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাধারণ ওয়ার্ড আর কেবিনে দেখার ফি আলাদা। আইসিইউ কিংবা আইটিইউ-র পরিষেবা বাবদ চিকিৎসকের ভিন্ন পারিশ্রমিক হয়। এটা ‘গোপন খরচ’ হিসাব।
অনেক সময় ওটি খরচ নেওয়ার পরেও যন্ত্রপাতি খরচ হিসাবে আলাদা টাকা ধার্য হয়, আবার ওষুধের দামের তারতম্যও দেখা যায়। অথচ বিলে চিকিৎসক পারিশ্রমিকের স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। প্রশ্ন উঠছে, সেগুলি নিয়ে নজরদারি না করে কেন চিকিৎসক পারিশ্রমিকে ‘গোপন খরচ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যেমন বলছেন ইএনটি চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রায় তিনশো শতাংশ লাভ করে। কীভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রে সেই লাভ হচ্ছে, সেটা তদন্ত হওয়া দরকার।’’
রোগীর পরিজনদের বিলের কোন অংশগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকছে না সে সম্পর্কে জানতে হবে। এমন অনেক খাতে খরচের হিসাব দেখানো হয় যেগুলি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলেও কোনও সদুত্তর মেলে না। সেই দিকগুলো চিহ্নিত করতে না পারলে সমস্যা মিটবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। যেমন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পারিশ্রমিক একই পরিমাণ থাকলেও সমস্যা নেই। তবে ‘গোপন খরচ’ এভাবে কমবে না। তার জন্য সার্বিক নজরদারি দরকার।’’
বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর মোট খরচের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ চিকিৎসকের পারিশ্রমিক হিসাবে ধার্য হয়। তাই খরচের পরিমাণ বা়ড়লে চিকিৎসক পারিশ্রমিক বাড়ে। পাশাপাশি, সব রোগী পিছু একই সময় দিতে হয় না। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে অতিরিক্ত সময় দিতে হবে। তখন চিকিৎসকের পারিশ্রমিকেও হেরফের হয়। এটা কর্পোরেট হাসপাতালের নীতি। এটাকে গোপন খরচ হিসাবে দাগিয়ে দিতে নারাজ অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা।
দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা চিকিৎসক সত্যজিৎ বসু জানান, সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী তুলনায় ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকা রোগীকে অনেক বেশি সময় চিকিৎসককে দিতে হয়। সময় ও শ্রম বেশি ব্যয় করতে হয় বলেই পারিশ্রমিকের তারতম্য হয়। সবাইকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতা এ দেশে নেই। দেশের ৭০% মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা বাজারি হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ অর্থনীতি না বুঝে চটকদারি সমাধান খুঁজলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না, বলেন আরেক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা চিকিৎসক কুণাল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy