বড় ঘরটায় বসে এক নাগাড়ে বকে চলেছেন তাঁরা। এলোমেলো কথা, হিহি হাসি, বিড়বিড়।
গত চার দিনে বারো জন মানসিক ভারসাম্যহীন এবং ভবঘুরেকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছে নদিয়ার চাপড়া থানার পুলিশ। না-এনেই বা করে কী? যাদের লোকে ‘সুস্থ’ বলে জানে, তারা গুজবে মত্ত হয়ে যাকে-তাকে ধরে পেটাচ্ছে। পিটিয়ে মেরে ফেলছে। এই ‘অসুস্থ’ লোকগুলোকে নিশানা করা সবচেয়ে সহজ। তাঁদের বাঁচাতে তাই ঠাঁই দিতে হয়েছে থানায়।
অচেনা লোকেরা নানা এলাকায় ঢুকে ডাকাতি, শিশু চুরি, শ্লীলতাহানি, এমনকী জঙ্গি কার্যকলাপ করছে বলে কিছু দিন ধরে নদিয়া, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মূলত হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মারফত ছড়ানো গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে কাউকে সন্দেহ হওয়া মাত্র গণপিটুনির রাস্তায় চলে যাচ্ছেন অনেকে। ক’দিন আগে কাজের খোঁজে বর্ধমানের কালনায় গিয়ে গণপ্রহারে খুন হয়েছেন নদিয়ার এক জন।
যাঁরা রাতদিন পথে-বিপথে পড়ে থাকেন, মাথার ঠিক নেই, চালচুলো নেই, এই পরিস্থিতিতে তাঁরা পড়েছেন বড় বিপদে। কয়েক দিন আগেই নাকাশিপাড়ার যুগপুরে মাঝবয়সী এক ভবঘুরেকে গণপিটুনি দেওয়া শুরু হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হোমে পাঠায়।
ওই এলাকা থেকেই আরও তিন জনকে রাস্তার ধার থেকে তুলে আনা হয়েছে। চাপড়া থানার ওসি রাজা সরকার জানান, গত চার দিনে তাঁরা ১২ জনকে উদ্ধার করেছেন। এঁদের মধ্যে ৪ জনকে এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদে বহরমপুরের হোমে এবং আট জনকে তাঁদের পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমান পূর্বস্থলী ১-এর বিডিও-র নামে প্রচারিত হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানানো হয়েছে, ওই ব্লকে সম্প্রতি যে ১১ জন হেনস্থা হয়েছেন, তাঁদের এক জন ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। ‘আজ ফেসবুকে দেখলাম কোনও এক দুর্বৃত্ত তার ছবি দিয়ে ক্যাপশন করেছে, ‘হাটসিমলায় ধরা পড়ল জঙ্গি’— বলছেন বিডিও।
কালনায় গণপ্রহারে মৃত্যু ও তার জেরে পরের দিন নদিয়ার হবিবপুর রণক্ষেত্র হওয়ার পরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুলিশ। নদিয়ার চাপড়া, নাকাশিপাড়া, কোতোয়ালি, শান্তিপুর, ভীমপুর, নবদ্বীপ মিলিয়ে অন্তত ৩০ জনকে থানায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল। এঁদের কারও ঠাঁই হয়েছে হোমে, কেউ ফিরেছেন বাড়িতে।
সোমবারই নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ থেকে উদ্ধার হয়েছেন এক ভবঘুরে। ফুলিয়ার বয়রা এলাকা থেকে এক ভবঘুরেকে তুলে এনেছিল শান্তিপুর থানার পুলিশ। তাঁকে ইতিমধ্যেই হুগলিতে তাঁর বাড়িতে ফেরানো হয়েছে। ভীমপুরে থেকেও দুই মানসিক ভারসাম্যহীনকে পাঠানো হয়েছে তাঁদের আসাননগর ও মুরুটিয়ার বাড়িতে।
সব মিলিয়ে এখন মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় পুলিশেরই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy