আইন মেনে আত্মসমর্পণ না করা অবধি পুলিশ যে তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াবে, তা বিমল গুরুঙ্গ শিবিরের প্রায় সকলেই জানেন। তাই বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপা দার্জিলিং ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হতেই গুরুঙ্গকে পাতলেবাসে ঢুকিয়ে ‘জন-বলয়’ গড়ার ছক কষা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। শুক্রবার সংঘর্ষের পরে এলাকার অনেকেই বিনয়-অনীতের পক্ষ নিয়ে গোপনে পুলিশের কাছে মুখ খুলেছেন। তাতেই পুলিশের সন্দেহ জোরদার হয়েছে।
পুলিশের দাবি, ভোরে পাতলেবাসের ঘাঁটিতে ঢুকে চারপাশের রাস্তা খুঁড়ে ফেলার জন্য ৩০০ শ্রমিককে কাজে লাগানোর ছক কষেছিলেন গুরুঙ্গপন্থীরা। তার পরে পাহাড়ের সব ব্লকে হুমকি দেওয়া শুরু হতো। জড়ো করা হতো কয়েক হাজার শিশু ও মহিলাকে। সেই ‘জন-বলয়ের’ ঘেরাটোপে প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসে সভা করতেন গুরুঙ্গ। এবং আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করে ফের পাহাড়ের নায়ক বনে যেতেন। গুরুঙ্গপন্থীরা মনে করছিলেন, আগেও যে ভাবে জনতার বৃত্ত গড়ে সাফল্য পেয়েছিলেন মোর্চা প্রধান, এ বারেও তার অন্যথা হবে না।
গুরুঙ্গের এই কৌশলকে ভেস্তে দিল এ দিনের অভিযান। কিছু দিন ধরেই তাঁর গতিবিধি নজরে রাখার চেষ্টা করছিল পুলিশ-প্রশাসন। তখনই লেপচাবস্তি ও লিম্বু বস্তির কাছে ছোট রঙ্গিতের ধারে এই ক্যাম্পটির খোঁজ মেলে। সেখানে গুরুঙ্গ নিয়মিত থাকতেনও না। তাই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল পুলিশ বাহিনী। বৃহস্পতিবারের অডিও বার্তাটি সামনে আসতেই পুলিশ নিশ্চিত হয়, ক্যাম্পেই রয়েছেন তিনি। তার পরেই এই হানা।
এই হানার ধাক্কা সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে গুরুঙ্গ শিবিরকে। রাতে রোশন গিরি বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ও এনআইএ তদন্ত দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, মোর্চার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং গুরুঙ্গ বন্ধ তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পরে যে বৈঠকের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা ভেস্তে দিতেই এটা রাজ্যের পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ‘‘এটা অন্যায়।’’ মোর্চা নেতৃত্বের এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।
কেন্দ্র কিন্তু এর মধ্যেই সুর বদলাতে শুরু করেছে। এ দিন সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গওবাকে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলতে নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি দলকেও জানান, গুরুঙ্গ মরিয়া হয়ে বাঁচার তাগিদে সন্ত্রাসের পথে হাঁটলেও, এ দিনের ঘটনার পরে দলের স্বার্থেই তাঁকে সমর্থন না করা ভাল।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য মমতার সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘পাহাড় কেমন হাসছে, এ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ।’’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, শান্তির লক্ষ্যে আলোচনাই এখন একমাত্র পথ। এর মধ্যে এ দিন রাজ্যের সব থানায় অমিতাভ মালিকের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy