Advertisement
২৯ মে ২০২৪

অভিযোগই সার, পোলবায় পুলিশ তোলাবাজ পায়নি

পোলবায় তোলাবাজ আছে কি না, এবং থাকলেও তাদের হাত কত লম্বা, তা মাপতে গত ৫ জুন সেখানকার কিছু শিল্পোদ্যোগী, ব্যবসায়ী ও চাষিকে চুঁচুড়া পুলিশ লাইনে বৈঠকে ডেকেছিল জেলা পুলিশ।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

হাটে হাঁড়ি ভেঙেছিলেন পোলবার ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী রফিকুল হাসান। তারকেশ্বরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে সরাসরি বলেছিলেন, ‘‘শিল্প করতে গিয়ে তোলাবাজদের খপ্পরে পড়েছি। গত ছ’বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও কারখানা গড়তে পারিনি।’’ রফিকুলের অভিযোগ ছিল মুখ্যমন্ত্রীরই দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে। অথচ, ভাঙা হাঁড়ি জোড়া দিতে শাসক দলেরই হাত ধরে হুগলির পুলিশ। ফল কী হয়েছে?

পোলবায় তোলাবাজ আছে কি না, এবং থাকলেও তাদের হাত কত লম্বা, তা মাপতে গত ৫ জুন সেখানকার কিছু শিল্পোদ্যোগী, ব্যবসায়ী ও চাষিকে চুঁচুড়া পুলিশ লাইনে বৈঠকে ডেকেছিল জেলা পুলিশ। ছিলেন জনা চল্লিশেক চাষি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরাও। কিন্তু কেউই তোলাবাজির অভিযোগ করেননি বলে পুলিশ জানাচ্ছে।

কেন? পোলবার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য সাহাদাত আলির বক্তব্য, ‘‘তোলাবাজি হলে তো অভিযোগ করবেন? রফিকুল হাসান মিথ্যে কথা বলেছেন। আসলে কারখানার ভিতরে এক বিঘে খাস জমির দখল পেতে উনি নানা ছলছুতো করছেন।’’ একই কথা বলেছেন ওই পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ও পোলবা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শ্যামল ঘোষও। তাঁর দাবি, ‘‘চাঁদা তুলে বছরে একটা রক্তদান অনুষ্ঠান করি। এলাকায় ব্যবসায়ী ও চাষিরাও তাতে অংশ নেন। সে দিনের বৈঠকে সকলে এই কথাই পুলিশকে বলেছেন। তোলাবাজির কথা কেউ উচ্চারণই করেননি।’’

তৃণমূল নেতাদের সামনে বৈঠকে তোলাবাজির অভিযোগ না-ওঠার মধ্যে অবশ্য কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছেন না প্রশাসনের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, কে-ই বা জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে ঝগড়া করে? ব্যবসায়ীদের পোলবাতেই সারা বছর ব্যবসা করতে হবে। কেন তাঁরা তোলাবাজির অভিযোগ করে শাসক দলের রোষে পড়বেন? প্রশাসনের ওই কর্তাদের বক্তব্য, তোলাবাজের হদিস পেতে পুলিশের যদি সদিচ্ছা থাকত, তা হলে ঢাক পিটিয়ে বৈঠক ডাকার দরকার পড়ত না। যাঁরা তোলাবাজির শিকার, তাঁদের একাম্তে ডেকে কথা বললেই প্রকৃত ছবিটা স্পষ্ট হত। পুলিশ অবশ্য সে দিনের বৈঠকের সমস্ত কথোপকথন ভিডিও রেকর্ডিং করে রেখেছে।

হুগলির পুলিশ পোলবায় তোলাবাজ খুঁজে পাক আর না পাক, মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু তারকেশ্বরের প্রশাসনিক বৈঠকে স্পষ্ট বলেছেন, তাঁর কাছে খবর আছে, কিছু লোক জেলে বসে সেখানকার চাষিদের হুমকি দিচ্ছে। কিছু লোক মোটরবাইক নিয়ে তোলাবাজি করছে। যাঁর কথায় খেই ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিন পুলিশের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, সেই রফিকুল হাসানকেও চুঁচুড়ার বৈঠকে ডেকেছিল পুলিশ। রফিকুলের বক্তব্য, ‘‘বৈঠকে কারা অভিযোগ করবে? তৃণমূলের নেতাদেরই তো লোক জোগাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Extortion Anti Socials
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE