Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Polio

পোলিয়োয় অচল পা, তবু রক্ত দিতে ছোটেন ইন্দ্রজিৎ

লাভপুরের গোপ্তা গ্রামের বাসিন্দা বছর সাতাশের ইন্দ্রজিৎবাবুর জন্ম প্রান্তিক চাষি পরিবারে।

স্কুটিতে ইন্দ্রজিৎ। নিজস্ব চিত্র

স্কুটিতে ইন্দ্রজিৎ। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৫
Share: Save:

পোলিয়ো কেড়ে নিয়েছে তাঁর চলার ক্ষমতা। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ করে তিন চাকার স্কুটিতে রক্ত দিতে ছুটে বেড়ান ইন্দ্রজিৎ পাল। সে এলাকার কোনও রক্তদান শিবিরই হোক বা হাসপাতাল – নার্সিংহোমই। রক্ত দিতে হবে শুনলে তাঁর তিন চাকার বাহনে গতি বাড়ে।

লাভপুরের গোপ্তা গ্রামের বাসিন্দা বছর সাতাশের ইন্দ্রজিৎবাবুর জন্ম প্রান্তিক চাষি পরিবারে। বিঘে আড়াই জমি চাষ করে সংসার চলে তাঁদের। বাবা প্রভাতকুমার পাল এবং মা কল্যাণীদেবীর একমাত্র সন্তান ইন্দ্রজিৎবাবুর সাত মাস বয়সে পোলিয়ো ধরা পড়ে। তবুও অদম্য মনের জোরে বাবা মা এবং সম্পর্কিত এক দাদার কোলে চেপে স্থানীয় বুদুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও পরে বিপ্রটিকুরী হাইস্কুলে ভর্তি হওয়া।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে থেকে অবশ্য একটি তিন চাকার সাইকেল মেলে। পরবর্তীকালে সাইকেলেই যাতায়াত করেই বিপ্রটিকুরি স্কুল উচ্চমাধ্যমিক এবং লাভপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। পাশাপাশি রক্তদান সহ বিভিন্ন সমাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। বছর পাঁচেক আগে একটি বেসরকারি নেটওয়ার্ক কোম্পানিতে কাজ পান। বেতনের টাকা জমিয়ে তিন চাকার স্কুটিটি কেনে। কিন্তু লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

তবে থেমে থাকে না সমাজকর্ম। রক্তদানের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে লকডাউনের সময় দুঃস্থদের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী এবং পোশাক দেন। ২০১৭ সাল থেকে মোট ১৫ বার রক্ত দিয়েছেন। কোথাও রক্তদান শিবিরের খরব পেলেই স্কুটি চালিয়ে হাজির হয়ে যান। গত বছর আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘খোলা হাওয়া’। কীর্ণাহার কল্লোল ভবনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘আশ্রয় ফাউন্ডেশন’। ‘খোলা হাওয়ার’ কর্ণধার প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার অর্পিতা ঘোষ জানান, ফেসবুকে জেনে স্বেচ্ছায় ইন্দ্রজিৎবাবু প্রায় ৩০-৩৫ কিমি দূর থেকে স্কুটি চালিয়ে এসে রক্ত দিয়ে গিয়েছেন।

হাসপাতাল, নার্সিংহোমেও রক্ত দেন ইন্দ্রজিৎ। লাভপুরের ঠিবার এহেসান কাজী, নানুরের সাকুলিপুরের সুজয় মেটেরা জানান, বছর খানেক আগে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে আমাদের এক আত্মীয়ের রক্ত অভাবে অপারেশানের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ইন্দ্রজিৎবাবু গিয়ে রক্ত দেন।

পাশাপাশি প্রতিবছরই নিজের গ্রামে রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করেন। সুধীর মণ্ডল, চন্দন হাজরা জানান, ইন্দ্রজিৎ গ্রামে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার পর থেকে আমরা রক্তের গুরুত্ব বুঝতে পারছি। এখন কারও রক্ত দরকার হলে সমস্যায় পড়তে হয় না।

জেলা ভলান্টিয়ার্স ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘‘কোথাও রক্তদান শিবির বা হাসপাতালে কারও রক্তের সমস্যার খবর পেলেই ইন্দ্রজিৎবাবু হাজির।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Polio Blood Indrajit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE