Advertisement
১৮ মে ২০২৪
উঠল মারধর, গুলি ছোড়ার অভিযোগ

অশান্তি চলছেই, নিশানায় শাসকদলের প্রার্থীও

ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই অশান্তির খবর ছড়াচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন পুরএলাকায়। কোথাও শাসকদলের প্রার্থীর বাড়ি লক্ষ করে গুলি ছো়ড়া র অভিযোগ উঠেছে। কোথাও আবার বিরোধী প্রার্থীদের দিনেদুপুরেই বাজার এলাকায় মারধরের অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের। শুক্রবার রাত থেকে বিভিন্ন জায়গায় অশান্তিতে ভোটের আগে আতঙ্কে পুরবাসী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০২
Share: Save:

ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই অশান্তির খবর ছড়াচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন পুরএলাকায়। কোথাও শাসকদলের প্রার্থীর বাড়ি লক্ষ করে গুলি ছো়ড়া র অভিযোগ উঠেছে। কোথাও আবার বিরোধী প্রার্থীদের দিনেদুপুরেই বাজার এলাকায় মারধরের অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের। শুক্রবার রাত থেকে বিভিন্ন জায়গায় অশান্তিতে ভোটের আগে আতঙ্কে পুরবাসী।

শনিবার রাতে নদিয়ার তাহেরপুর থানার বিননগর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী নন্দদুলাল রায়ের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জখম হন চার কর্মী।

হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় এতদিন বিরোধী প্রার্থীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠছিল বারবার। এ বার খোদ তৃণমূল প্রার্থীর বাড়িতে গুলি চলল। অভিযোগের তির সিপিএমের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে বাঁশবেড়িয়ার বকুলতলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অরিজিতা শীলের বাড়িতে রাত ১১টা নাগাদ গুলি চলে। তবে কেউ আহত হননি। একটি গুলি অরিজিতাদেবীর বাড়ির দরজায় লাগে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রচার সেরে রাতে বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করছিলেন অরিজিতাদেবী। তাঁর স্বামী সোনাবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না। সেই সময়ে কয়েকজন দুষ্কৃতী বাড়ির বাইরে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। শব্দ পেয়ে অরিজিতাদেবী বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন দুষ্কৃতীরা শূন্যে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চম্পট দেয় বলে তাঁর অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শনিবার দুপুরে অরিজিতাদেবী চুঁচুড়া থানায় বৈদ্যনাথ সাহা, পিন্টু ভট্টাচার্য, বাপি চক্রবর্তী এবং শিবু নামে চার সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী কারণে ওরা আমার বাড়িতে গুলি চালাল বুঝলাম না। কারও সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই। ভোটের আগে বিরোধীরা এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে চক্রান্ত করছে।।’’ এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের বাঁশবেড়িয়া জোনাল সম্পাদক অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই ঘটনা। এর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই।’’

আবার কল্যাণীতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তিন তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতেও আগুন লাগানো হয় বলেও অভিযোগ। শুক্রবার রাতে কল্যাণী পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঘটনায় শনিবার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব দে-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণী পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কল্যাণী শহর তৃণমূলের কার্যালয়ের সামনে পুরভোটের জন্য অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় তৈরি করা হয়েছিল। পাশেই কর্মীদের জন্য একটি অস্থায়ী ঘরও তৈরি করা হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেখানে তৃণমূলের কর্মীরা ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় এক বাসিন্দা দেখেন, ওই কার্যালয়ে আগুন জ্বলছে। খবর পেয়ে কল্যাণী দমকল কেন্দ্রের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ইতিমধ্যে খবর আসে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তৃণমূল সমর্থক শঙ্কর বৈদ্য, শ্যামল ঘোষ ও কমল বিশ্বাসের বাড়িতে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অরূপ রায় নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির গাড়িতেও আগুন লাগানোর চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ।

ঘটনার পর কল্যাণী শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি ভেবেছিল কল্যাণী পুরসভা নির্বাচনে তারা ভাল ফল করবে। কিন্তু, যত দিন যাচ্ছে তারা বুঝতে পারছে মানুষ তাদের পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন। তাই দিশেহারা হয়ে বিজেপি কর্মীরা এখন এলাকায় অশান্তির পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।’’ তিনি জানান, এই ঘটনায় শাসকদলের পক্ষ থেকে বিপ্লব দে-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কল্যাণী শহর বিজেপি-র সভাপতি নির্মলচন্দ্র সরকার। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তৃণমূলেরই গোষ্ঠী কোন্দল ছাড়া আর কিছু নয়।’’ প্রসঙ্গত, এক সময় বিপ্লব দে ওরফে সজল কল্যাণী শহর তৃণমূল যুবার সভাপতি ছিলেন। এলাকায় তিনি কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত ছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সদলবলে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে তৃণমূলের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সেই থেকে তিনি এলাকা ছাড়া বলে বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে। এ দিন তাঁর সঙ্গে ফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বিরোধীদের উপর হামলা থেমে নেই। এ দিন বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরে চায়ের দোকান থেকে টেনে কংগ্রেসের দুই প্রার্থীকে মারধরে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। সোনামুখী পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী আকাশ ধীবর ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সাদ্দাম হুসেনের অভিযোগ, তাঁরা রথতলার একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন। সেই সময় তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী তাঁদের চড় মারে। বেশি প্রচারে নামলে আরও মারধর করা হবে বলে শাসায়। পরে তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। যদিও তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান মিহির মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “ও সব বানানো গল্প। আমাদের কোনও কর্মী এই ঘটনায় যুক্ত নয়।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

অশান্তির খবর মিলেছে পুরুলিয়া শহরেও। শুক্রবার রাতে পুরুলিয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির দু’টি অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস দুষ্কৃতীরা ভেঙে দেয়। প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে বিজেপি এলাকায় মিছিল বের করে। পরে তাঁরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই রাতেই ২১ নম্বর ওয়ার্ডে যমুনাবাঁধ এলাকায় কংগ্রেসের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, ব্যানার পুড়িয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব তা অস্বীকার করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE