এম টি কৃষ্ণবাবু, চেয়ারম্যান, কলকাতা বন্দর
সিন্ডিকেটের অত্যাচার ও তোলাবাজিতে দাঁড়ি টানতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বারবার মুখ খুলছেন। জুলুমবাজি ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য হাইকোর্ট বারবার ভর্ৎসনা করছে রাজ্য প্রশাসনকে। এ বার সিন্ডিকেট রাজকে বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে অভিহিত করলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার কলকাতায় এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান এমটি কৃষ্ণবাবু আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘কী আর বলব, এটাও বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ! যে কারণে বন্দর থেকে রেলপথে ভোজ্য তেল গন্তব্যে পাঠানো যায় না। যখনই আমদানিকারী সংস্থা রেলে ভোজ্য তেল নিয়ে যেতে চায়, বিরোধিতা শুরু হয়। পরিবহণ আটকে দেওয়া হয়।’’
এখানেই না-থেমে কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ, আদালতের হস্তক্ষেপেও পরিস্থিতি বদলায়নি। ‘‘মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে ট্যাঙ্কার ছাড়া ভোজ্য তেল চালান করা সম্ভব নয়। খরচ বেশি পড়লেও নয়! অদ্ভুত নিয়ম!’’— মন্তব্য করেছেন তিনি।
বন্দর-চেয়ারম্যান এত ক্ষুব্ধ কেন?
প্রশাসনের খবর: হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরে নোঙর করা জাহাজ থেকে নামানো ভোজ্য তেল রেলপথে পরিবহণের উদ্যোগ ভেস্তে দিচ্ছে এক শ্রেণির ‘ট্যাঙ্কার মাফিয়া’। যারা কিনা সড়কপথে ট্যাঙ্কার মারফত ভোজ্য তেল চালানের একচেটিয়া কারবার চালায়। তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেলপথে ভোজ্য তেল পরিবহণ হয় না। খরচ বেশি পড়বে জেনেও ‘মাফিয়া’দের দাপটে আমদানিকারীরা সড়কপথ এড়াতে পারে না।
এর প্রতিকার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা করেছে নেপালের দু’টি সংস্থা। যারা মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া থেকে ভোজ্য তেল এনে বজবজে মাদার ডেয়ারির গুদামে মজুত করে। সেই তেল রেলের ওয়াগনে চাপিয়ে রক্সৌল পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে নেপালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু গত বছর থেকে ট্যাঙ্কার-মালিকদের একাংশ তাতে বাধা দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত গত ১৬ জুন দক্ষিণ ২৪ পরগনার এসপি’কে নির্দেশ দেন, নেপালের সংস্থা দু’টি যাতে নিরুপদ্রবে নিজেদের মর্জিমাফিক বজবজ থেকে ভোজ্য তেল নিয়ে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা হোক। কাজ হয়নি। উল্টে বিচারপতি দত্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ট্যাঙ্কার সংগঠনের তরফে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে।
পাশাপাশি এমন জুলুমবাজি রুখতে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে পরের পর তোপ দেগেছে আদালত। গত ১৫ জুলাই এক জনস্বার্থ-শুনানিতে হাইকোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের জুলুম রুখতে কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্য যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সন্তোষজনক। কিন্তু এ পর্যন্ত যা প্রকাশ্যে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।’’ নেপালের সংস্থা দু’টির হেনস্থা প্রসঙ্গে অন্য এক মামলায় গত ২০ জুলাই তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘কোর্ট পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও কাজ হয়নি! থানায় গেলে কী হয়, সেটা আমাদের জানা আছে।’’ ওই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি চেল্লুর মন্তব্য করেন, ‘‘পেশিশক্তি প্রশাসন চালাতে পরে না।’’
এ দিন বন্দর-চেয়ারম্যানের মন্তব্যেও সেই সমালোচনা ও কটাক্ষের ধারাবাহিকতা বজায় রইল। বন্দর-সূত্রের খবর: বজবজ তো বটেই, হলদিয়া ও কলকাতাতেও ট্যাঙ্কার মাফিয়াদের দাপটের কমতি নেই। তবে হলদিয়া ট্যাঙ্কার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুশান্ত দাস তা মানেন না। তিনি বলছেন ‘‘বন্দর-কর্তাদের এ সব বলতে হয়। তাই বলেছেন।’’ তাঁর বক্তব্য— ভোজ্য তেল বন্দরের স্টোরেজ ট্যাঙ্কারে রেখে দরকার মতো ট্যাঙ্কারে চাপিয়ে চালান করা হয়। প্রত্যন্ত এলাকায় ট্যাঙ্কারই পৌঁছয়। এতে খরচও কম।
তাই আমদানিকারীরা স্বেচ্ছায় ট্যাঙ্কার বেছে নিচ্ছেন বলে সুশান্তবাবুদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy