সৌজন্য: সংবর্ধনা মঞ্চে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মমতা। মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁকে সমর্থন করেননি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর রামনাথ কোবিন্দকে প্রথম নাগরিক সম্মান দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি আমাদের বন্ধু, পথপ্রদর্শক— ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড।’’ আপ্লুত রাষ্ট্রপতি বাংলায় বলে ওঠেন, ‘‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আপনাদের ভালবাসা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।’’
রাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থী রামনাথের মনোনয়নের পরেই মমতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘কে কোবিন্দ? চিনি না। কোনও দিন নামও শুনিনি।’’ কোবিন্দ তখন ছিলেন বিহারের রাজ্যপাল। সে সব এখন অতীত। মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনার সেই মঞ্চে মমতা বলেন, ‘‘আমাদের রাষ্ট্রপতি এমন মাটির মানুষ, আগে তা বুঝিনি। তিনি অনেক দিন রাজ্যসভায় ছিলেন। আমি লোকসভায়। কিন্তু নিজেকে এত গুটিয়ে রাখতেন যে, তাঁর কাজ সম্পর্কে কিছু জানতেই পারিনি।’’ এর পরেই রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে মমতার আহ্বান, ‘‘আপনি আমাদের উপদেশ দিন, দিশা দেখান। আপনি আসায় বাংলার ইজ্জত বাড়ল।’’
আরও পড়ুন: বইমেলার আসরে সর্বোচ্চ ফরাসি সম্মান সৌমিত্রকে
অন্যান্য উপঢৌকনের সঙ্গে নিজের আঁকা একটি ছবিও মুখ্যমন্ত্রী উপহার দেন রামনাথকে। আনন্দিত রাষ্ট্রপতি লিখিত ভাষণের বাইরে গিয়ে বলেন, ‘‘ছবিটি পেয়ে ভাল লাগছে। আরও ভাল লাগছে এটা জেনে যে ছবিটি মুখ্যমন্ত্রী নিজে এঁকেছেন।’’ ছবিটি তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে রাখবেন, তা-ও জানিয়ে দেন।
নির্বাচন পর্বে যিনি ছিলেন মমতার ‘অপছন্দের’, তাঁকেই সবার আগে এই রাজ্যে ডেকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হল কেন? অনেকে এর পিছনে রাজনৈতিক অঙ্ক কষছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, রামনাথ এনডিএ প্রার্থী হয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢুকলেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন হবে তাঁরই জমানায়। তাই নানা কারণে এই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় রাখা ভাল।
মমতার ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য বলে, এটা একেবারেই সৌজন্য। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সাংবিধানিক সৌজন্য রক্ষার খাতিরে। তখনই তিনি রামনাথকে পশ্চিমবঙ্গে আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানালেই আমি যাব।’’ সেই মতো এ দিনের আয়োজন। এর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনও রাষ্ট্রপতিকে রাজ্যে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। প্রণববাবুকেও মমতা নাগরিক সংবর্ধনা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদে তাঁর বিরোধিতা করা সত্ত্বেও। সে ক্ষেত্রে আরও একটি বাড়তি যুক্তি ছিল। তিনি প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি।
স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে কলকাতার একাধিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, খেলোয়াড়, চিত্রপরিচালক, সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী-সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ হাজির ছিলেন এ দিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম বিধায়করা অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে যাননি। তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস— রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে ত্রুটি ছিল। তাই তাঁরা যাননি। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘প্রত্যেক বিধায়ককে আলাদা করে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। পরিষদীয় দলকে নয়। কেউ গিয়ে থাকলে তা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি যাইনি।’’ সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য জানান, তিনি আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন অনুষ্ঠান শুরুর পরে।
এ দিন বেলা একটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব বিবেক কুমার। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চের আসার পর একসঙ্গে ঢোকেন রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। প্রারম্ভিক ভাষণ দেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানান রাষ্ট্রপতিকে। তাঁর হাতে তুলে দেন বাংলার মিষ্টি, দুর্গার ডোকরা মূর্তি এবং নিজের আঁকা ছবি।
রাজ্যপাল তাঁর ভাষণে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অবদান থেকে শুরু করে রাজ্যের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খেলাধুলো এবং চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। সবশেষে তাঁর বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘মিষ্টি, আড্ডা এবং ফুটবলের জন্য বাংলার প্রতি টান তো আছেই। সেই টানে আবার আসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy