Advertisement
১৬ মে ২০২৪
বিধিতে বদল

এ বার সহজেই ছুটি পাবেন মনোরোগীরা

মানসিক হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের ফাঁস আলগা করল স্বাস্থ্য দফতর।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share: Save:

মানসিক হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের ফাঁস আলগা করল স্বাস্থ্য দফতর।

আদালতের নির্দেশ আর লাগবে না। প্রয়োজন পড়বে না পরিবারের লোকেদের অনুমতিও। যদি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মনে করেন রোগী সুস্থ, তা হলে তাঁর সার্টিফিকেটের উপরে ভিত্তি করে কোনও আত্মীয়, বন্ধু বা কোনও সংস্থার প্রতিনিধি তাঁকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে পারবেন।
এত দিন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে যাঁরা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হতেন, ফের আদালতের নির্দেশ পেলে তবেই তাঁরা ছুটি পেতেন। লাল ফিতের ফাঁসে সেই প্রক্রিয়ায় বহু ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর লেগে যেত। একই ভাবে আউটডোরের মাধ্যমে বাড়ির লোকেরা যাঁদের ভর্তি করতেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ছাড়া পাওয়ার সমস্যা হয়। এক বার হাসপাতালে ঢুকিয়ে দিয়ে বহু ক্ষেত্রেই বাড়ির লোকেরা আর খোঁজখবর নেন না। রোগী সুস্থ হওয়ার পরে হাসপাতাল যোগাযোগ করলে জানিয়ে দেন, রোগীকে তাঁরা বাড়ি ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী নন। ফলে সুস্থ হয়েও বছরের পর বছর মানসিক হাসপাতালে কাটাতে বাধ্য হন বহু মানুষ। অনেককে আমৃত্যুও থেকে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।
সোমবার স্বাস্থ্য ভবনে বিচার বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বৈঠক হয়। সেখানেই মানসিক হাসপাতালের উপচে পড়া ভিড় সামলানোর জন্য ছুটির প্রক্রিয়া সরলীকরণের প্রসঙ্গ ওঠে। বৈঠকে দুই বিভাগের প্রতিনিধিদের অনেকেই স্বীকার করে নেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই নিয়মের কারচুপি চলছে। লাল ফিতের ফাঁস নিয়েও কথা হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, মানসিক স্বাস্থ্য আইনের ৪০ নম্বর ধারায় বলা ছিল, দায়িত্বশীল যে কেউ রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটা এত বছর কার্যত কাগজে-কলমেই থেকে গিয়েছিল। কেউ মানতেন না। এ বার থেকে সেটা কঠোর ভাবে মানতে হবে। তিনি
বলেন, ‘‘এত দিন কোর্টের নির্দেশে ভর্তি হলে কোর্টের নির্দেশেই ছাড়া পেতে হতো। তা নিয়ে বিস্তর টালবাহানা হতো। যার খেসারত দিতে হতো রোগীদের। এখন থেকে আদালতের নির্দেশে ভর্তি হওয়া রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা আদালতকে জানালেই হবে। বাড়ির লোক ভর্তি করে থাকলে তাঁদেরও জানিয়ে দেওয়াটা দস্তুর। যে কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সংগঠন রোগীকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। তবে তাঁকে নিজের বৈধ পরিচয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক লিখিত ভাবে জানিয়ে আবেদন করতে হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের নয়া নির্দেশ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে মনোরোগীদের পুনর্বাসনের কাজে ব্রতী রত্নাবলী
রায় বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কোর্ট অর্ডারের মাধ্যমে ভর্তির
ক্ষেত্রেও বহু সময়ে নিয়মের ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এ সব বন্ধ না হলে হাসপাতালের ভিড়ও কমবে না, পরিষেবার উন্নতিও অসম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Psychiatrist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE