পাগড়ি খোলা বিতর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিজেপির নবান্ন অভিযানে শিখ সম্প্রদায়ের এক জনের পাগড়ি খোলা নিয়ে বিতর্কে এ বার ময়দানে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। ওই কাণ্ডে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। একই সুর শোনা গিয়েছে শিরোমণি অকালি দল (এসএডি)-এর প্রধান সুখবীর সিংহ বাদলের গলাতেও। বিতর্কে ইতি টানতে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার তত্ত্ব অবশ্য জোরাল ভাবেই খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। পুলিশ কর্তাদের একাংশের মতে, ওই ঘটনা নিয়ে অনর্থক জলঘোলা করা হচ্ছে।
বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার বিজেপির ‘নবান্ন চলো’ অভিযানে। ওই কর্মসূচি চলাকালীন বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বাধে। কোথাও কোথাও তা ধস্তাধস্তির চেহারা নেয়। সেই সময়ের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় সেদিন সন্ধ্যা থেকেই। তাতে দেখা যায় এক শিখ যুবককে আটক করছে পুলিশ। তখন টানাহ্যাঁচড়ায় তাঁর পাগড়িটি খুলে যাচ্ছে। সেই পাগড়ি খোলার ঘটনা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। শুক্রবার তা নিয়ে মুখ খোলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিংহ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ময়দানে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে তাঁর সংবাদমাধ্যম উপদেষ্টা রবীন ঠাকরাল টুইটারে লিখেছেন, ‘এটা ঠিক হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এক শিখ যুবককে কী ভাবে হেনস্থা করছে, গ্রেফতারের সময় পাগড়ি খুলে দিচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করায় সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’
Not done, says Punjab CM @capt_amarinder, expressing shock at humiliating treatment of a Sikh youth by @WBPolice, who reportedly pulled off his turban during arrest. CM has urged @MamataOfficial to take strict action against concerned cop for hurting Sikh religious sentiments. pic.twitter.com/bixa26ar4B
— Raveen Thukral (@RT_MediaAdvPbCM) October 9, 2020
ধর্মীয় ভাবাবেগের বিষয়টি উস্কে দিয়ে আসরে নেমেছেন সুখবীরও। টুইটারে এসএডি প্রধান লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিরাপত্তা কর্মী বলবিন্দর সিংহের উপরে যে ভাবে বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণ চালিয়েছে এবং তাঁর পাগড়িকে অপমান করেছে তার তীব্র নিন্দা করছি। এই অপমান সারা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায়কে ক্ষিপ্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মমতাজির কাছে আর্জি জানাচ্ছি।’
Strongly condemn the vicious attack on a Sikh security official Balwinder Singh & disrespect of his #turban by West Bengal Police. The dishonour has infuriated Sikhs across the world. I urge @MamataOfficial ji to take exemplary action against the erring policemen. pic.twitter.com/o0QUP9pnWJ
— Sukhbir Singh Badal (@officeofssbadal) October 9, 2020
আরও পড়ুন: শিখের পাগড়ি খুলেছে পুলিশ, মমতাকে টুইট হরভজনের
এ বিষয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কোনও সম্প্রদায়কে নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। এই রাজনীতি বাংলায় চলে না। আমরাও আন্দোলন করেছি। আমার নামেও অনেক মামলা ছিল। কিন্তু কোনও দিন ধর্মের কথা ভাবিনি। মিছিলে পিস্তল নিয়ে এসেছে। পুলিশ তো ধরবেই। এর সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দেওয়া মানে পাপ।”
যাঁর পাগড়ি খোলা নিয়ে এত বিতর্ক, সেই শিখ যুবক বলবিন্দর সিংহের থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তলও উদ্ধার করেছিল পুলিশ। হাওড়া কমিশনারেট সূত্রে খবর, বলবিন্দর নিজেকে বিজেপি যুবমোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য তথা ব্যারাকপুরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্গু পাণ্ডের ‘দেহরক্ষী’ বলে পরিচয় দেন। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া নথি অনুযায়ী, তিনি জম্মু-কাশ্মীরের রজৌরি জেলার বাসিন্দা। বলবিন্দরের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অস্ত্র নিয়ে ঘোরার অভিযোগে মামলা করেছে হাওড়া থানার পুলিশ। কারণ পুলিশের দাবি, ওই আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য যে লাইসেন্স বলবিন্দর দেখিয়েছেন, তা রজৌরির জেলাশাসকের ইস্যু করা। সেই লাইসেন্সে পরিষ্কার লেখা আছে, ওই অস্ত্রটি নিয়ে শুধুমাত্র ওই জেলার মধ্যেই ঘোরাফেরা করা যাবে। ফলে এ রাজ্যে সেই অস্ত্র বহন করা বেআইনি।
বস্তুত, প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, প্রিয়াঙ্গু কোন স্তরের নেতা, যে তাঁর সঙ্গে সবসময় নাইন এমএম পিস্তলধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকবে। তিনি তো কোনও সরকারি নিরাপত্তা পান না। নিজের নিরাপত্তায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী তিনি নিয়োগ করতেই পারেন। তা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই সব নিরাপত্তারক্ষীরও মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা বেআইনি। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এই ধরনের মিছিলে কারও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ওই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যেতেই পারেন না। আর যেখানে ১৪৪ ধারা জারি আছে, সেখানে তো এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা একেবারেই বেআইনি!’’
পাগড়ি বিতর্কের প্রথম ধাপেই অবশ্য শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। এখনও সেই বক্তব্যেই অটল হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট বা রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা। শুক্রবার রাতেই রাজ্য পুলিশ বলবিন্দরের ঘটনা সম্পর্কে বিজেপির নবান্ন অভিযানের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। সেটির কথা উল্লেখ করে রাজ্য পুলিশের দাবি, ‘ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে ওই যুবকের পাগড়ি আপনা থেকেই খুলে গিয়েছে। কোনও পুলিশকর্মী পাগড়ি খুলে দেননি’। টুইটে আরও বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সমস্ত ধর্মকে শ্রদ্ধা করে’। পুলিশের দাবি, ঘটনার পরেই পুলিশ বলবিন্দরকে তাঁর পাগড়িটি পরে নিতে বলে এবং গ্রেফতারের পর গাড়িতে তোলার সময় তিনি পাগড়ি পরেও নেন। সেই ছবিও পুলিশ টুইটারে প্রকাশ করেছে।
The concerned person was carrying firearms in yesterday's protest. The Pagri had fallen off automatically in the scuffle that ensued,without any attempt to do so by our officer (visible in the video attached). It is never our intention to hurt the sentiments of any community(1/2) pic.twitter.com/aE8UgN36W5
— West Bengal Police (@WBPolice) October 9, 2020
আরও পড়ুন: সারদা-কাণ্ডে চূড়ান্ত চার্জশিট পেশের আগে মুকুলের সঙ্গে মুখোমুখি জেরার দাবি কুণালের
রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে জল ঘোলা করা হচ্ছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ধস্তাধস্তির সময় এ রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। কেউ ইচ্ছে করে টান মেরে তাঁর পাগড়ি খুলে দেয়নি বা কোনও ধর্মকে অসম্মান করেনি।’’ তাঁর দাবি, গোটা ঘটনার ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের অন্য এক আধিকারিক কয়েক বছর আগে একটি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘ওই দিনও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, টানাহ্যাঁচড়ায় অনেকের মাথার টুপি খুলে গিয়েছিল।’’ তাঁর বক্তব্য, খোদ পঞ্জাবেও এমন পরিস্থিতিতে কারও পাগড়ি খুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
প্রসঙ্গত, বিজেপির ওই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাগড়ি খুলে যাওয়ার ভিডিয়ো টুইট করেছিলেন দিল্লির জংপুরের বিজেপি নেতা ইমপ্রীত সিংহ বক্সি। তার পর থেকে যত সময় গড়িয়েছে, ততই ভার্চুয়াল জগতে স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ওই টুইট। আর তা নিয়ে জলঘোলাও শুরু হয়েছে। ইমপ্রীতের দেওয়া ভিডিয়োটি দেখে মমতার কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য টুইটে আবেদন জানিয়েছিলেন হরভজন। তার পরেই বিষয়টি ভিন্নমাত্রায় চলে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy