স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি উদ্ধার। শনিবারের নিজস্ব চিত্র।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে থাকা জমি উদ্ধার করে দিল প্রশাসন। মাসখানেক আগেই প্রশাসনের কাছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি থেকে বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদের আবেদন জানিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া) অসীমকুমার বালা শনিবার দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান।
বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থায়ী ঝুপড়িতে দোকান, হাট প্রভৃতি চলছিল। এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছিল, তেমনই ভবিষ্যতে ওই এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর আরও ভবন তৈরি করার ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হতো। সম্প্রতি বাঁকুড়া শহরের কয়েকটি জায়গায় প্রশাসন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করে বেলিয়াতোড়ের ওই জমিও দখলমুক্ত করা হবে। এ জন্য প্রশাসন থেকে কয়েকদিন আগেই এলাকায় মাইকে ঘোষণা করে ওই জমি থেকে নির্মাণ সরিয়ে নিতে বলা হয়। ব্যবসায়ীদের একাংশ দোকান খালিও করে ফেলেছিলেন।
এ দিন সকাল থেকে ওই এলাকায় বাকি সমস্ত বেআইনি নির্মাণ প্রশাসন ভেঙে দেয়। কোনও দিক থেকে বাধা আসেনি বলেই জানিয়েছেন মহকুমাশাসক (সদর)। তিনি বলেন, ‘‘ঘোষণার পরেই ব্যবসায়ীরা অনেকেই নিজেদের দোকাল খালি করে দিয়েছিলেন। এ দিন নির্বিঘ্নেই অভিযান শেষ হয়েছে।’’ তিনি জানান, বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গায় অবশ্য কয়েকটি নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ওই সব নির্মাণ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে বলে, তাতে হাত দেওয়া হয়নি। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিকে, বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা মোড় থেকে লালবাজার মোড় পর্যন্ত সুভাষ রোডের প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের অবৈধ নির্মাণও ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই এলাকায় অবৈধ নির্মাণ ভাঙার দিন ঠিক করেছে প্রশাসন। ঘটনা হল, বাঁকুড়া শহরের ব্যবসার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এই সুভাষ রোড হওয়ায় এখানে দখলদার উচ্ছেদকে এক ধরণের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছে প্রশাসন।
বাঁকুড়া শহরজুড়ে একসময়ে বেদখল উচ্ছেদে নেমেছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক রিনা ভেঙ্কটরমন। বাধাও এসেছিল নানা দিক থেকে। তৎকালীন বামফ্রন্ট নেতৃত্বও বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি। কিন্তু তিনি অদমনীয় মনোভাব নেওয়ায় তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল— ‘বুলডোজার লেডি’র তকমা।
তারপর দীর্ঘদিন ধরে এই শহরে দখল উচ্ছেদে সে ভাবে প্রশাসনকে নামতে দেখা যায়নি। এ দিকে শহরের রাস্তা ক্রমশ হকার ও ব্যবসায়ীদের দখলে ছোট হতে থাকায়, ক্ষোভ বাড়ছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। মাসখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দখল উচ্ছেদ করতে বাঁকুড়া পুরপকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। তারপরেই সাহসী হয়ে পথে নামে প্রশাসন।
সুভাষ রোডের ব্যবসায়ীদের একাংশের ক্ষোভ, প্রায়ই পুরসভা বা জেলা প্রশাসন রাস্তার সামনের দোকানের অংশ ভেঙে দিতে বলে। বলা হয়, রাস্তার পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। সেই মতো আমরা রাস্তা থেকে সরে যাই। কিন্তু কেউই কোনও উন্নয়নের কাজ কিছুই করে না।
এই এলাকায় দোকানগুলোতে যখন প্রচুর ভিড় হয়, তখন রাস্তার পাশেই অনেকখানি জায়গাজুড়ে সাইকেল, মোটরবাইক প্রভৃতি রাখা থাকে। কারণ এই এলাকায় কোনও ‘পার্কিং প্লেস’ প্রশাসন তৈরি করেনি। নেই শৌচাগারও। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু আমরাই ওই সব সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছি না, ক্রেতারাও তো ভুগছেন। প্রশাসন রাস্তা ফাঁকা করে যদি ওই সব ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে দেয়, তাহলেই কাজের কাজ হবে।
এ প্রসঙ্গে মহকুমাশাসকের আশ্বাস, ‘‘দখলমুক্ত করে ওই রাস্তা চওড়া করে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করার পরিকল্পনা আছে। সব হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy