Advertisement
১৯ মে ২০২৪
স্কুলশিক্ষা দফতরের ভূমিকায় প্রশ্ন

কমিটি গড়তে দেরি, স্কুলে স্কুলে প্রশাসক

সময় মতো পরিচালন সমিতি গঠিত না হওয়ায় প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে বসেছে জেলার বহু স্কুল। তার ফলে ওই সব স্কুলে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা দফতরের গাফিলতিতেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে জেলার শিক্ষামহলের অভিযোগ।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৩
Share: Save:

সময় মতো পরিচালন সমিতি গঠিত না হওয়ায় প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে বসেছে জেলার বহু স্কুল।

তার ফলে ওই সব স্কুলে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা দফতরের গাফিলতিতেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে জেলার শিক্ষামহলের অভিযোগ।

দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত (এডেড) স্কুলগুলিতে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, দাতা বা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের পাশাপাশি নির্বাচন কিংবা মনোনয়নের মাধ্যমে অভিভাবকদের নিয়ে পরিচালন সমিতি গঠিত হতো। ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষে ‘রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান’ প্রকল্পে সরকারি সহায়তা পেতে হলে স্কুলগুলিকে পুরোপুরি সরকারি আওতাভুক্ত (স্পনসর্ড) করার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারও সেই মাফিক আইন সংশোধন করে স্কুলগুলির কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চায়, তারা কোন স্তরে থাকতে চায়। জবাবে জেলার অধিকাংশ স্কুলই সে সময় পুরোপুরি সরকারি আওতাভুক্ত হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করে।

এর ফলে ওই সব স্কুলে পরিচালন সমিতি গঠনের পদ্ধতিও পাল্টে যায়। নিয়মানুযায়ী, ওই পরিচালন সমিতিতে তিন বছরের জন্য শিক্ষা দফতর প্রেরিত ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী তিন জন প্রতিনিধি, এক জন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি, প্রধান শিক্ষক-সহ তিন জন শিক্ষক, এক জন শিক্ষাকর্মী এবং ১ জন শিক্ষা দফতরের আধিকারিকের থাকার কথা। ওই কমিটির অবশ্য তাদের প্রথম সভায় প্রতি ১ বছরের জন্য আরও দু’জন করে অভিভাবক প্রতিনিধি সংযোজন করে নেওয়ার অধিকারও রয়েছে।

ওই কমিটি গঠন নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছি। ২০১৩ সালে শিক্ষা দফতর স্কুলগুলির কাছে নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত পুরনো কমিটিতেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ পাঠায়। কিন্তু, তার পরে তিন বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত বীরভূমের একটি বড় সংখ্যক স্কুলে শিক্ষা দফতর তাদের প্রতিনিধিই পাঠাতে পারেনি বলে অভিযোগ। তাই ওই সব স্কুলে নতুন পরিচালন সমিতিও গঠন হয়নি। এ দিকে, আবার সম্প্রতি শিক্ষা দফতর স্কুলগুলির কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছি, নির্ধারিত পরিচালন সমিতি না থাকায় সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হচ্ছে। শিক্ষা দফতরেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এই ধরনের স্কুলের সংখ্যা ৮৩টি।

ওই চিঠি পাওয়ার পরেই স্কুলগুলিতে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন, বিশেষ করে ছুটি-সহ নানা বিষয়ের সিদ্ধান্ত পরিচালন সমিতির অনুমোদন সাপেক্ষ। এ বার থেকে ওই সব কাজের জন্য স্কুলগুলিকে খাতাপত্র নিয়ে প্রশাসকের দফতরেই ছোটাছুটি করতে হবে। কারণ, মূলত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের এক বা একাধিক স্কুলে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা দফতর। এমনিতেই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের হাজারও কাজ। তার উপরে এক জন পরিদর্শককে কোথাও কোথাও অস্থায়ী ভাবে দু’টি চক্রের দায়িত্বও সামালাতে হয়। সে ক্ষেত্রে স্কুল পরিচালনার প্রতি তাঁরা কতটা নজর দিতে পারবেন, সে নিয়ে সংশয়ে শিক্ষা দফতরেরই একাংশ।

সংশয়ে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। নলহাটির কয়থা হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদরুদ্দিন খান, ময়ূরেশ্বরের জামালপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সানাউল হোসেনরা বলছেন, ‘‘শিক্ষা দফতর প্রতিনিধি পাঠায়নি বলেই আমরা নতুন পরিচালন কমিটি গড়তে পারিনি। এখন স্কুলের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসকের হাতে দেওয়ার চিঠি পাঠিয়েছে। এর পর তো সব কাজেই আমাদের প্রশাসকের কাছে ছোটাছুটি করতে হবে। পঠনপাঠন ব্যাহত হবে।’’

সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অধীর দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতেই শিক্ষকের ঘাড়ে নানা সরকারি কাজের বোঝা চাপানো হয়। এ বার নিজেদের গাফিলতির দায়ও চাপানো হল। এর পর প্রশাসক নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলিতে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হবে।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক অবশ্য জানিয়েছেন, জেলা শিক্ষা দফতর নয়, স্কুলগুলিতে সরাসরি রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর কথা। ‘‘কিন্তু কী কারণে তা পাঠানো হয়নি বলতে পারব না। পরিচালন সমিতি না থাকায় নিয়ম মাফিক বেশ কিছু স্কুলে প্রশাসক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে,’’—বলছেন রেজাউল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE