জঙ্গলের জিমে চলছে শরীরচর্চা। নিজস্ব চিত্র।
সারি সারি শাল, মহুয়ার গাছ। ঘন জঙ্গলের মাঝেই ছায়ায় ঘেরা ছোট্ট একটা ফাঁকা জায়গা। সেই ফাঁকা জায়গাই এখন সকাল সন্ধে গমগম করে। নিজেদের উদ্যোগেই জঙ্গলের মাঝে গ্রামের যুবকেরা তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটা জিম! আদরের নাম ‘ইকো জিম’, কেউ কেউ বলেন ‘সব পেয়েছির আসর’। এই জিমকে ঘিরেই এখন বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের বলরামপুরের যুবকদের দু’চোখে স্বপ্নের আনাগোনা।
শুরুটা বছর দশেক আগে। বলরামপুরের যুবকেরা শরীরচর্চার জন্য একটি জিমের প্রয়োজন অনুভব করেন। কারও লক্ষ্য শরীর চর্চা করে সেনাবাহিনী ও পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়া। কারও বা নেহাতই শরীর সুস্থ সতেজ রাখা। কিন্তু প্রত্যন্ত ওই গ্রামে জিম তৈরির জন্য কে আর আগ্রহ দেখায়! অগত্যা নিজেদের চাহিদা পূরণে গ্রামের যুবকেরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। বাড়ি বাড়ি চেয়ে চিন্তে জোগাড় করা হয় নানা মাপের বাঁশ, খুঁটি, প্রয়োজনমতো দড়ি, জমে যাওয়া সিমেন্টের চাঁই। আশপাশ ঘুরে ঘুরে জোগাড় করা হয় পুরনো ট্রাক ও ট্রাক্টরের টায়ার, প্রয়োজনমতো দড়ি। আর এ সব দিয়েই গ্রামের প্রান্তে জঙ্গলের মধ্যে আস্ত একটা জিম তৈরি করে ফেলেন তাঁরা।
কী নেই সেই জিমে! চিনিং বার, ডন বার, রেসকিউ রোপ, ভারোত্তলনের সামগ্রী, ডাম্বেল, বারবেল সব মিলিয়ে জিমের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও শরীরচর্চার সামগ্রী মজুত রয়েছে সেখানে। তবে সব কিছুই ওঁদের হাতে তৈরি। তা-ও আবার বাড়ি ও বাজারের ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে।
সোনামুখী থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার পথে পাথরমোড়া থেকে একটু এগোলেই জঙ্গলের মাঝে শাল-মহুয়ার চাঁদোয়ার নীচে তৈরি এই ‘ইকো জিম’। প্রতি দিন সকাল সন্ধে নিয়ম করে সে জিমে শরীরচর্চা করেন যুবকেরা। চলে যোগ ব্যায়াম ও প্রাণায়ামের মতো অভ্যাস। গ্রামের যুবক তপন গরাই বলেন, ‘‘আমরা সকলেই কৃষিজীবী পরিবারের। স্বাভাবিক ভাবে শহরে গিয়ে ব্যায়সাপেক্ষ জিমে শরীরচর্চা করার ক্ষমতা আমাদের অনেকের নেই। সেই জায়গায় আমাদের এই ইকো জিম গ্রামের যুবকদের শরীরচর্চার চাহিদা পূরণ করে আসছে। এখানে শরীরচর্চা করে আমাদের গ্রামের একাধিক যুবক সেনাবাহিনী ও পুলিশের চাকরির শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।’’
গ্রামেরই বাসিন্দা শ্যামসুন্দর গরাই বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের যুবকেরা সম্মিলিত ভাবে নিজেদের নিরলস শ্রম ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সবুজের মাঝে এই ইকো জিম তৈরি করেছে। এক প্রজন্মের হাত ধরে ধীরে ধীরে এই জিমে আসতে শুরু করেছে গ্রামের পরবর্তী প্রজন্মও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy