Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Anubrata Mondal

৫৭০ ভরি এখন অতীত, কেষ্টর পুজোর কালীমূর্তিতে উঠল মাত্র ৪০ ভরি সোনা! নেই উন্মাদনাও

বর্তমানে আসানসোল সংশোধনাগারে রয়েছেন অনুব্রত। দুর্গাপুজোর মতো কালীপুজোতেও জেলেই থাকতে হল তাঁকে। ‘কেষ্টদা’ জেলে থাকায় তাঁর শ্যামাপুজোর কী হবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চর্চা চলছিল।

অন্যান্য বছর এ ভাবেই কেষ্টকে দেখা যেত কালীপুজোয়।

অন্যান্য বছর এ ভাবেই কেষ্টকে দেখা যেত কালীপুজোয়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ২১:২১
Share: Save:

জাঁক নেই। জৌলুস নেই। অনুব্রত মণ্ডল জেলে থাকায় কার্যত নমো নমো করেই এ বছর বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ের শ্যামাপুজো হল। বীরভূমে এই পুজো ‘কেষ্টদা’র কালীপুজো বলেই পরিচিত। এত বছর ধরে এই পুজোয় নিজের হাতে কালীমূর্তিকে সোনার গয়না পরিয়ে এসেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত। সেই পুজোয় এ বছর মায়ের গায়ে উঠল গুটিকয়েক সোনার গয়না!

গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে এখন আসানসোল সংশোধনাগারে রয়েছেন অনুব্রত। দুর্গাপুজোর মতো কালীপুজোতেও জেলেই থাকতে হল তাঁকে। ‘কেষ্টদা’ জেলে থাকায় তাঁর শ্যামাপুজোর কী হবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চর্চা চলছিল। অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, বরাবর এই পুজোর সমস্ত ব্যবস্থাই ‘কেষ্টদা’ করে এসেছেন। নিজে হাজির থেকে পুজোর যাবতীয় আয়োজন সেরেছেন। জাঁকজমকই আলাদা তার। প্রতি বছরই কিছু না কিছু চমক থাকত! ২০২০ সালে অতিমারির সময়েও কালীমূর্তিকে ৩০০ ভরির বেশি সোনার গয়নায় সাজানো হয়েছিল। গত বছর সোনার মুকুট, বাউটি, বাজুবন্ধন, চুড়, কানের দুল, গলার হার মিলিয়ে প্রায় ৫৭০ ভরি সোনার গয়নায় কালীমূর্তিকে নিজে সাজিয়েছিলেন অনুব্রত।

কিন্তু এ বার কেষ্ট-বিহীন পুজোর জাঁক আদৌ থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন দলের কর্মীদের একাংশ। তাঁদের সেই শঙ্কাই কার্যত সত্যি হল। ‘কেষ্ট’র পুজোয় এ বছর কালীমূর্তি সাজানো হল মেরেকেটে ৪০ ভরি সোনার গয়না দিয়ে। যে পুজো দেখতে আগে অন্য জেলা থেকে দলের কর্মীরা ছুটে আসতেন, সেই পুজোয় এ বার জেলার কর্মীদের মধ্যেও উন্মাদনা দেখা গেল না। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেষ্টদা জেলে। কারও মন ভাল নেই। এত বছর ধরে এই পুজোর সব দায়িত্ব নিজে পালন করে এসেছেন দাদা। সব ব্যবস্থা নিজে করতেন। বর্ধমান থেকেও লোক আসত। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। পুজো তো আর বাদ দেওয়া যায় না। ন্যূনতম আয়োজনেই এ বছর পুজো করছি আমরা।’’

গত বছর যে বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না দিয়ে কালীমূর্তি সাজিয়েছিলেন অনুব্রত, তার বাজার দর ছিল তিন কোটি টাকারও বেশি। এ বছর গোটা পুজোর বাজেট কমে দেড় লক্ষে এসে ঠেকেছে বলে দাবি করেন মলয়। তিনি জানান, জেলা কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদা নিয়ে এ বছর পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। মলয়ের কথায়, ‘‘জেলা কমিটিতে দেড়শো জন মতো রয়েছেন। তাঁদের সকলের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে দেড় লক্ষ টাকার একটি তহবিল তৈরি করা হয়। সেই টাকায় এ বছর পুজো হচ্ছে। লোকজন খাওয়ানোও হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করতে ন্যূনতম যতটুকু আয়োজন লাগে, ততটাই করা হয়েছে এ বার!’’

এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। বিজেপির এক জেলা স্তরের নেতার কথায়, ‘‘গত বছর কালীপুজোয় যে ব্যবসায়ী সোনার গয়না দিয়েছিলেন, অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই ঘটনাই প্রমাণ করে, ওই ব্যবসায়ীও সিবিআইয়ের আতশকাচের তলায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই উনি সোনার গয়না দিতে আসবেন না! আর তা ছাড়া অনুব্রতবাবু তো জেলে রয়েছেন। গয়না দেবেন তো দেবেন কাকে?’’ যদিও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তৃণমূলের জেলার নেতারা।

(এই প্রতিবেদনে প্রথম বার লেখা হয়েছিল, জেলা কমিটির প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এই তথ্য সঠিক নয়। সঠিক তথ্য হল, জেলা কমিটির প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE