এই ঘরে বসেই নকল আধার কার্ড তৈরি করত সব্যসাচী কুন্ডু। নিজস্ব চিত্র।
নাম আলাদা। আধার নম্বরও আলাদা। কিন্তু ছবির জায়গায় হয় নিজের, নয়তো বাবার ছবি। আর এই কৌশলেই ফোটোশপে শ’য়ে শ’য়ে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করত বাঁকুড়ার ই ওয়ালেট-কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড সব্যসাচী কুন্ডু। তার জালিয়াতি চক্রের জাল কত দূর কোথায় ছড়িয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
কোনও আধার কার্ডে নাম পাপু পাল, কোথাও নবকুমার দাস, কোথাও অয়ন সেন আবার কোথাও নরেন লাহা। নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাবার নামও বদলেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। ঠিকানা লেখা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর। তবে আধার নম্বর আলাদা। মনগড়া এই সব নাম, নম্বর এবং জন্মতারিখ বসিয়ে ফোটোশপে নিজের ছবি জুড়ে শ’য়ে শ’য়ে আধার কার্ড তৈরি করত সব্যসাচী। আধার কার্ডে বাবা অনন্ত কুন্ডুর ছবিও বসিয়েছিল সে। অবশ্য ছেলের এই কর্মকাণ্ডের বিন্দুবিসর্গও টের পাননি বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার রাস্তার ধারে চায়ের দোকানদার বাবা অনন্ত। ছেলে নানা অছিলায় মোবাইলে তাঁর যে ছবি তুলত সে কথা জানিয়েছেন তিনি। নিজের বাড়িতেই গোপনে সব্যসাচী তৈরি করে ফেলেছিল ভুয়ো আধার কার্ড তৈরির আস্ত একটি ‘কারখানা’। আর সেখানে তৈরি করা আধার কার্ড দেখে বোঝার উপায় নেই তা নকল। নকল নথির ভিত্তিতেই বিভিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার ডজন ডজন সিম কিনে তা দিয়ে ই ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট তৈরি করত বাঁকুড়ার খড়বোনা গ্রামের ওই যুবক সব্যসাচী। ওই অ্যাকাউন্ট সে বিক্রি করত বিভিন্ন প্রতারক গোষ্ঠীকে। আর তা থেকেই মিলত মোটা টাকা।
মোটা টাকা আয় করে তা দিয়ে বাইক কিনেছিল সব্যসাচী। ট্রাক্টর কিনে শুরু করেছিল ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসাও। সব্যসাচীর কাকা মথুর কুন্ডুর অবশ্য দাবি, ‘‘ও তেমন বুদ্ধিমান ছেলে নয়। একটু হাবাগোবা ধরনের। সে যে গোপনে এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছিল তা জানতাম না। পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরও বুঝতে পারিনি সে কী অপরাধ করেছে। পরে নানা ভাবে ওই ঘটনার কথা জেনে অবাক হচ্ছি।’’
সব্যসাচীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইতিমধ্যেই গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের মোবাইল সংস্থার ডিলার বাপি গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দু’জনকেই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। আর কারা ওই চক্রে যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ছাতনা থানার আড়রা গ্রামের জেটিয়াপুকুর সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ৯০টি ফোনই সব্যসাচীর। বাঁকুড়ার প্রথম ই ওয়ালেট চক্র ধরা পড়তেই আতঙ্কে প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছিল সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy