Advertisement
২৯ মে ২০২৪

স্কুল কামাই করে জঙ্গলে

বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের রাউতখন্ড পঞ্চায়েতের ছোট্ট একটি গ্রাম কলাইডাঙা।

কুরচির মালা বানিয়েই চলে সংসার। নিজস্ব চিত্র

কুরচির মালা বানিয়েই চলে সংসার। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৮:৫৬
Share: Save:

কুরচি ফুল মেঘের খুব প্রিয়, জানত মেঘদূতের যক্ষ। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জবা লোহারের আবার মেঘ একদম পছন্দ নয়। মেঘ মানেই বৃষ্টি। বৃষ্টি মানে ভিজে সপসপে হয়ে যাবে কুরচি গাছ। তাহলে মা-ঠাকুমা মালা কাটবেন কীসে? এক বেলা খেয়ে থাকতে হবে দিনের পর দিন।

জবার যে এই অবস্থা, সে কথা অবশ্য অনেকেই জানেন না। বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের রাউতখন্ড পঞ্চায়েতের ছোট্ট একটি গ্রাম কলাইডাঙা। সেখানে কুড়চির মালা কেটে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ৬০টি পরিবার। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও কখনও বসে পড়ে কুরচির ডাল কাটতে। কখনও শালপাতা সেলাই করতে। একাদশ শ্রেণির মালা লোহার যেমন। স্কুল থেকে পড়ার বই পেয়েছে। এসেছে কন্যাশ্রীর আওতায়। তবে সংসার টানতে সব কাজেই হাত লাগাতে হয় তাকে। মাঝে মধ্যেই স্কুলে না গিয়ে জঙ্গলে যায় শালপাতা তুলতে। সংগ্রহ করে আনে কুড়চি কাঠি।

গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তফসিলি জাতির। ঘরদোরে অনটনের চিহ্ন স্পষ্ট। বিপিএল তালিকায় সবার নাম নেই। একশো দিনের কাজ? ২০১৮ সালে কেউ পাননি। জব কার্ড দেখান— ২০১৭ সালে কেউ পেয়েছেন পনেরো দিন। কেউ ন’দিন। একেবারেই কাজ পাননি, এমন নজিরও রয়েছে। অগত্যা কেউ কেউ পূবে খাটতে চলে যান। কেউ হাতির ভয় নিয়েই জঙ্গলের পাতা তুলতে যান। বুনো শুয়োরের ভয় আছে সেখানে। আছে বিষধর সাপখোপের ভয়। রীনা লোহার, মনসা লোহারেরা বলেন, “একদিন পরিবারের সবাই মিলে পাতা সেলাই করে বা কুড়চির মালা কেটে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পাই। এতে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব। সারাবছর কাজও থাকে না।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মূল সমস্যা হয় বর্ষায়। তখন শালপাতা বা কুরচির কাঠি ভিজে থাকে। সে সব দিয়ে কোনও কাজ হয় না। মাটির ঘর। খড়ের চাল। নেই জমিজমাও। চালের ফুটো দিয়ে বর্ষার জল পড়ে। প্রায়ই সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেন না। অভিযোগ, সে খোঁজ রাখেন না কেউ।

রাউতখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জুলা কোলে বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বিষয়টি জানতাম না।’’ বিডিও (জয়পুর) বিট্টু ভৌমিক বলেন, “সম্প্রতি এই ব্লকে এসেছি। ওই গ্রামের মানুষের দুরবস্থার কথা আমার জানা ছিল না।’’ সরঞ্জাম দিয়ে বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আওতায় এনে ওই পরিবারগুলির জন্য কিছু করা যেতে পারে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হবে বলে প্রশাসনিক স্তর থেকে শোনা গিয়েছে।

মনসা লোহাররা বেশি কিছু চান না। তাঁরা বলছেন, ‘‘সরকারি সহায়তায় শালপাতা বা কুড়চি মালা নিয়ে প্রকল্পের কথা ভাবলে বেঁচে যেত বেশ কয়েকটি পরিবার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poverty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE