সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারের পরে একটি শুনানির দিনে আসানসোল আদালত চত্বরে অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র
জেলবন্দি জেলা সভাপতির গন্তব্য কি তবে দিল্লিই? বৃহস্পতিবার আসানসোল সংশোধনাগারে অনুব্রত মণ্ডলকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করার পর থেকেই এই প্রশ্ন ঘুরছে বীরভূম তৃণমূলের অন্দরে।
সেহগাল হোসেনের মতো অনুব্রতকেও যে ইডি গ্রেফতার করতে পারে, সেই সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু, সেটা যে এত তাড়াতাড়ি হবে, ভাবেননি অনেকেই। ফলে এ দিনের ঘটনার পরেই দলের মধ্যে আলোড়ন পড়ে যায়। প্রশ্ন ঘুরতে থাকে, কেষ্টদাকে কি সত্যি দিল্লি নিয়ে যাবে ইডি। কারও জিজ্ঞাসা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে কি তা হলে দলের জেলা সভাপতির কোনও পরামর্শ বা দিকনির্দেশ মিলবে না?
দলের তাবড় নেতারা অনেকটাই নিশ্চিত, এমনই ঘটতে চলেছে। তাঁদের মতে, অনুব্রতের এক সময়ের দেহরক্ষী সেহগালের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটেছে। আসানসোল সংশোধনাগারে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই সেহগালকে গ্রেফতার করে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল ইডি। জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি তথা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তোড়জোড় চলছিল। বৃহস্পতিবারের ঘটনাক্রম দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। আইনি পথেই লড়তে হবে।’’ তবে জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পথে এখনও বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপ বাকি।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী ভাবে চলবেন দলের নেতা-কর্মীরা, তা নিয়ে সম্প্রতি দু’বার ‘বিশেষ বার্তা’ আসানসোল আদালতের এজলাস থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের দিয়েছেন অনুব্রত। দাদা দিল্লি চলে গেলে কী হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত তৃণমূলের কর্মীরা।
অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে বীরভূমে দল চালানোর জন্য গঠিত কোর কমিটির মাথায় থাকা জেলা পরিষদের সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘আমরা বসে পর্যালোচনা করব। ওঁর তৈরি সংগঠন নিয়ে কাজ করে চলেছি। আমরা সকলে একসঙ্গে চলব।’’ তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে এর প্রভাব পড়বে না। অন্য দিকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের মন্তব্য, ‘‘চাপ ছিলই, সেটা আরও বাড়ল। তবে কেন্দ্রীয় সংস্থার যে ভূমিকা, তাতে আমাদের কর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবেন।’’
কিন্তু, দলের একাংশ মনে করছে, মুখে বললেও অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে দল চালানোর কাজ সহজ নয়। ইডি কেষ্টকে নিয়ে যেতে পারে, সে কথছা ভেবেই বীরভূমের সংগঠন নিয়ে ভিন্ন ভাবনা নিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামী ২৬ তারিখ জেলার সব বিধায়ক ও শাখা সংগঠনের প্রধানদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিট অফিসে ডাকা হয়েছে। জেলার এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘ওই বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে সকলে।’’
বিরোধীরা অবশ্য এই খবরে খুশি। বিজেপি-র বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অষ্টম মণ্ডল বলেন, ‘‘কৃতকর্মের ফল। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের ফল ভাল হবে, কারণ সন্ত্রাসের নায়ক গ্রেফতার হয়েছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল সবটার (গরু পাচার) সঙ্গে একা যুক্ত, তেমনটা নয়। তাই ওঁকে গ্রেফতার করলেই হবে না, ওঁর পাশে যাঁরা সর্বক্ষণ ছিলেন, ওঁর মাথায় যাঁদের হাত ছিল, অনুব্রতকে যাঁরা ব্যবহার করেছেন, তাঁদেরও বিচার হতে হবে।’’
তথ্য: বাসুদেব ঘোষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy