গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
টেন্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে এ বার বিষ্ণুপুর পুরসভার নজরে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠরাও। ওই পুরসভায় ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে শ্যামাপ্রসাদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত আধিকারিকদের একাংশকে বদলি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুরসভার ভিতরেই তাঁদের বদলি করা হবে বলে সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে পুলিশের পাশাপাশি শনিবার থেকে এই দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তও শুরু করেছে পুরসভা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুর পুরসভার কোন কোন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে এবং তা কী ভাবে করা হয়েছে, তা খুঁজে বার করবেন পুর কর্তৃপক্ষ। এমনকি, সরকারি প্রকল্পে স্বজনপোষণের অভিযোগও খতিয়ে দেখার চেষ্টা শুরু করেছেন তাঁরা। অন্য দিকে, পুরসভার ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে পুর প্রশাসক বোর্ড। দুর্নীতি রুখতে পুরসভার অন্দরে নজরদারির পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হবে। বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন অর্চিতা বিদ বলেন, “সরকারের নিয়মকানুন অমান্য করে পুরসভার মাধ্যমে সরকারি টাকা কী ভাবে খরচ করা হয়েছে, তা দেখার পাশাপাশি স্বজনপোষণের অভিযোগও আমরা খতিয়ে দেখছি। দুর্নীতিমুক্ত পুরসভাই আমাদের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যে পুরসভায় বেনিয়মগুলিকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।”
প্রসঙ্গত, অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি-কাণ্ড প্রকাশ্য আসে। তাতে মূল অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্তর অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ অগস্ট শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুরসভার প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ গড়াই এবং শ্যামাপ্রসাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে পরিচিত রামশঙ্কর মোহান্তিকেও গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় শ্যামাপ্রসাদের বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও সোনা। হদিশ পাওয়া যায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের জমিজমারও।
এর পরই নড়েচড়ে বসে বিষ্ণুপুর পুরসভা। পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি টেন্ডার সংক্রান্ত নথিপত্রও খতিয়ে দেখা শুরু হয় পুরসভার তরফে। শ্যামাপ্রসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিষ্ণুপুর পুরসভার বহু উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের কাজের পর লোকদেখানো টেন্ডার ডাকা হয়েছে। অনলাইনে টেন্ডার প্রক্রিয়া এড়াতে একই কাজকে বিভিন্ন ভাবে ভেঙে ৫ লক্ষ টাকার কম বরাদ্দ দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। অফলাইনে ওই কাজের টেন্ডার ডেকে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, কাজ না করেও ঠিকাদারকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ শ্যামাপ্রসাদের বিরুদ্ধে। তদন্তকারীদের পাশাপাশি বিষ্ণুপুর পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ধরনের প্রতিটি বেনিয়মের ক্ষেত্রে ঠিকাদারের সঙ্গে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে শ্যামাপ্রসাদের। কোন কোন প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ ধরনের বেনিয়ম হয়েছে, তার তালিকাও তৈরি করছে পুরসভা। পাশাপাশি, ভুয়ো উপভোক্তা দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া বা তাতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আদৌ স্বজনপোষণ হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে বাড়ানো হচ্ছে নজরদারিও। পুরসভা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই পুরভবনকে সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। আগে বিষ্ণুপুর পুরসভায় ২৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক কারণে অচল। সেগুলিকে ফের সচল করার পাশাপাশি পুরসভার বিভিন্ন দফতরে অতিরিক্ত ১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ক্যামেরার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।পুরসভার বিভিন্ন দফতরে কারা আনাগোনা করছেন বা দফতরে বসে পুরকর্মীরা বেনিয়ম করছেন কি না, তার উপর নজরদারি চালানোর উদ্দেশ্যেই এই নজরদারি বলে সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy