দুমড়ে: আগুন নেভার পরে বাঁকুড়ার হেভিরমোড়ে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
মাঝ রাতে মুখোমুখি ধাক্কা লাগল দুই ট্রাকের। দাউ দাউ করে জ্বলে গেল দু’টি ট্রাক। ঝলসে মারা গেলেন দুই ট্রাকের চালক। গুরুতর জখম হয়েছেন এক জন।
মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া শহরের উপকন্ঠে হেভির মোড় এলাকায়। গাড়িতে থাকা নথি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পুড়ে যাওয়ায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত মৃত ও জখম ব্যক্তিদের পরিচয় পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। সন্ধ্যায় জানানো হয়, মৃতেরা হলেন বিহারের বরহাট থানার মাখনপুর গ্রামের রাহুল কুমার (২০) এবং বিহারেরই গিদধাউড় থানার দোলাকাটাবার রিতল যাদব (২১)। ট্রাক দু’টির একটি ওডিশা ও অন্যটি তমলুকের বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ট্রাকগুলি আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত প্রায় দু’টো নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওডিশা থেকে আসা ট্রাকটি সিমেন্ট বোঝাই করে দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়ার দিকে আসছিল। অন্য দিকে, তমলুকের ট্রাকটি পাথর বোঝাই করে বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল। তীব্র গতিতে বিপরীতমুখী দু’টি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পরেই গাড়ি দু’টিতে আগুন লেগে যায়।
খবর পেয়ে দমকল ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি গাড়িরই চালকের মৃত্যু হয়েছে। আগুনে পুড়ে ঝলসে গিয়েছে তাঁদের দেহ। জখম ব্যক্তি কোনও এক গাড়ির খালাসি বলেই মনে করছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পরে কোনও ভাবে ট্রাকের দরজা খুলে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জখম খালাসির চোট গুরুতর। কথা বলার মতো অবস্থায় তিনি নেই।
দুর্ঘটনার পরে গাড়ি দু’টিতে আগুন লাগল কী ভাবে?
তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, পাথর বোঝাই গাড়টি সরাসরি সিমেন্ট বোঝাই গাড়িটির ডিজেল ট্যাঙ্কে ধাক্কা মারে। ডিজেল ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটেই অগ্নিকাণ্ড বাধে। প্রচণ্ড শব্দ হয়। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশ এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে যান। তাঁরা জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার পরে এত জোরে শব্দ হয় যে, অনেক দূর থেকেও শোনা গিয়েছিল। সেই আওয়াজ শুনে অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়। তাঁরা বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন, দাউ দাউ করে দু’টি গাড়ি জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা পুলিশ ও দমকলে খবর দেন।
ঘটনা হল, হেভিরমোড় এলাকাটি এমনিতেই দুর্ঘটনা প্রবণ বলে চিহ্নিত। তিন মাথার এই মোড়ে, এক দিকে বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুর যাওয়ার ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক। অন্য দিকে, বাঁকুড়া থেকে রানিগঞ্জ যাওয়ার ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এক সঙ্গে মিশছে।
সম্প্রতি বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু একটি নির্দেশিকা জারি করে ওই এলাকায় গাড়ির গতি কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ তার পরেও বেশির ভাগ গাড়িই গতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা মানছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মানুষজন। এর আগেও হেভিরমোড় ও সংলগ্ন এলাকায় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বার তাই ওই এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকাপাকি ভাবে পুলিশ শিবিরের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশের তরফে দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy