Advertisement
২০ মে ২০২৪
Anubrata Mondal

ধর্মের কল, বলছেন ‘গাঁজা কেসে’ ধৃতেরা

সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলে অনেকে দাবি করেন, অনুব্রতর নির্দেশে ‘গাঁজা কেস’ দিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করিয়ে ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছিল।

কথা না শুনলেই গাঁজা বা মাদক কেসে ফাসিয়ে দিতেন অনুব্রত।

কথা না শুনলেই গাঁজা বা মাদক কেসে ফাসিয়ে দিতেন অনুব্রত। — ফাইল চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫১
Share: Save:

‘গাঁজা কেস’ তথা মাদক মামলার কথা প্রকাশ্যেই একাধিকবার শোনা গিয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মুখে। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশকে ব্যবহার করে গাঁজা পাচারের ভুয়ো মামলা করিয়ে বিরোধীদের, এমনকি দলেরও অনেককে ‘দমন’ করতেন অনুব্রত। তাঁর তিহাড় জেল যাত্রার পরে সেই গাঁজা-মামলায় গ্রেফতার হওয়া দু’জন বলছেন, ‘‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।’’

সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলে অনেকে দাবি করেন, অনুব্রতর নির্দেশে ‘গাঁজা কেস’ দিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করিয়ে ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছিল। এমন মামলাতেই গ্রেফতার হন নানুরের বেলুটি গ্রামের বাসিন্দা বিজেপির ব্লক সাংগঠনিক পর্যবেক্ষক কল্যাণ সিংহ এবং লাভপুরের বাসিন্দা বিজেপির জেলা কার্যকরী সদস্য সুপ্রভাত বটব্যাল। ১৮ মাস জেল খাটার পর সিউড়ি আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান তাঁরা। অনুব্রত তথা কেষ্টকে বিঁধে দু’জনেই বলছেন, ‘‘অন্যায় করলে তার শাস্তি পেতেই হয়।’’

২০১৩ সালে বোলপুর কলেজে পড়াকালীন তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন কল্যাণ। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তৃণমূলের বড়া-সাওতা অঞ্চল কমিটির যুব সভাপতিও ছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, ওই সময় অনুব্রতকে দলের বিভিন্ন দুর্নীতি এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও লাভ না হওয়ায় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপিতে যোগ দেন কল্যাণ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তারপর থেকেই তৃণমূল নেতৃত্বের বিষ নজরে পড়তে হয়। প্রায়ই গাঁজার কেস দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হত।’’

একই অভিযোগ সুপ্রভাতেরও। তিনি এক সময় সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী তথা রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৯ সালে বাড়ি থেকে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁর মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে লাভপুর সন্নিহিত এলাকা। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরে অপহরণের অভিযোগে সুপ্রভাত-সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।

তাঁরা বলেন, ‘‘বর্ধমানের শক্তিগড়ে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার একটি সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলাম। বের হতেই অনুব্রতর নির্দেশে ইলামবাজার থানার পুলিশ আমাদের মিথ্যা মাদক মামলায় গ্রেফতার করে। ১৮ মাস বিনা দোষে জেল খেটে বেকসুর খালাস পেয়েছি। জানতাম ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।’’ তাঁরা এই দিনটার প্রতীক্ষায় ছিলেন বলে জানাচ্ছেন দু’জনেই।

বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ এক সুরে বলেন, ‘‘শুধু গাঁজার মামলায় নয়, বিরোধীদের দমাতে অনুব্রত মণ্ডল বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটিয়েছেন। তিহাড়ে তিনি আসল জেল বাসের স্বাদ পাবেন। মিথ্যা মামলায় অন্যকে ফাঁসানোর মর্ম বুঝবেন।’’

তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল ফাঁসিয়ে ছিলেন এমন অভিযোগ ঠিক নয়। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ ছিল তাই হয়তো পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পরে অভিযোগ যথার্থ মনে না হওয়ায় আদালত খালাস দিয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলও একদিন খালাস পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal mayureshwar Tihar Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE