রাস্তার বাঁকে পড়ে রয়েছে বালি। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাস্তা জুড়ে ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকা যে কত বিপজ্জনক, তা তারপীঠের ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রাস্তায় পড়ে থাকা বালিতে বাইকের চাকা হড়কে গিয়ে গত শনিবার মৃত্যু হয়েছিল এক শিক্ষিকার। কিন্তু এর থেকে কেউ কী শিক্ষা নিয়েছেন? কিংবা প্রশাসনগত ভাবে কোনও উদ্যোগ কী আদৌ নেওয়া হয়েছে? সিউড়ি শহরে এলে তা অন্তত মালুম হয় না।
রবিবার যে ছবি ধরা পড়েছিল রামপুরহাটে, সোমবার বোলপুরে, সেই একই ছবি মঙ্গলবার ধরা পড়ল জেলা সদর সিউড়িতেও। পুলিশ সুপারের বাংলো যা এসপি মোড় নামেই বেশি পরিচিত, সেখান থেকে একটু এগোতেই দেখা গেল সিউড়ি-রামপুরহাট যাওয়ার প্রধান সড়কের উপর স্টোন চিপস ঢেলে রাখা। ইমারতি সামগ্রীর বিশাল স্তুপ। বেশ অসুবিধা করেই ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করছে বাস, ট্রাক, সাইকেল, মোটরসাইকেল, টোটো এবং পথচারীরা। পুরসভার ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝখানে কে এই ভাবে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রেখেছে?
স্থানীয় বাসিন্দার জানালেন, ওই রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা ভিতরে শ্রীভূমি পল্লিতে বাড়ি বানাচ্ছেন এক পুলিশ কর্মী। এ কাজ তাঁরই। কিন্তু সেই পুলিশ কর্মীর নাম কী? কোন থানায় কর্মরত সেটা জানাতে পারেননি তাঁরা। ঠিক যে জায়গায় স্টোন চিপস ফেলা হয়েছে তার সামনের একটি গলিতে নিজের কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালান সৌমেন দত্ত। সৌমেনবাবু বলছেন, ‘‘দিন চারেক ধরে একইভাবে পড়ে রয়েছে পাথরগুলি কে সরাবে কখন সরাবে জানি না। তবে খুব অসুবিধা হচ্ছে সকলের। যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে।’’ পাশেই গ্যারাজ চালান শেখ মঞ্জুল। রাস্তায় স্টোন চিপস পড়ে থাকা নিয়ে তাঁরও একই বক্তব্য।
সিউড়ির ৩ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাস্তায় উপর আবার এক সঙ্গে বালি ও ইট ফেলে রাখা হয়েছে রক্ষাকালীতলার কাছাকাছি। রাস্তার প্রায় অর্ধেকটা আটকে থাকায় যথেষ্ট আসুবিধায় পড়ছেন ওই রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ এবং যানবাহন। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে ঝুলে একটি বিদ্যুতবাহী তার। রাস্তায় এই ভাবে ইমারতি সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখে, যেই ছবি তোলা হল, অমনি এক যুবক এগিয়ে এসে বললেন মালিক নেই। তবে ইট বালি আজকেই উঠিয়ে নেওয়া হবে। তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে যুবক সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে জবাব দেন, ‘‘জানি তারাপীঠের দুর্ঘটনার কথা। আপনাদের এখানে কী করতে এসেছেন তাও জানি। কাল আর এগুলো রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখবেন না।’’
সিউড়ি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকেও চোখে পড়়ল দুটি জায়গায় বালি ও স্টোনচিপস পড়ে রয়েছে। যেই ছবি তুলতে যাওয়া হল, মাছ বিক্রি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অন্ন মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলা এগিয়ে এলেন। রীতিমতো চিৎকার করে রাস্তার ঠিক পাশেই একটি বাড়ি দেখিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘এই দেখুন ওঁদের বাড়ি তৈরি হবে, তার জন্য কীভাবে রাস্তায় বালি ফেলে রেখেছে। বলেছিলাম রাস্তা থেকে বালি সরাও রাস্তায় পড়ে বঁটিতে হাত কাটবে। কিন্তু শুনলে তো!’’ যাঁদের বালি সেই বাড়ির গৃহিনী জানালেন, ‘‘বালি সরিয়ে নেব আজ মিস্ত্রীরা কাজে আসেনি।’’ পরিচয় জানতে চাইলে নিজের নাম গোপন রেখে গহকর্তার নাম বললেন দ্বারিকা প্রসাদ সাউ। একই ভাবে রাস্তায় ফেলে রাখা পাথর দ্রুত বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে নেবেন বলে জানালেন বিমান ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ী। এভাবে রাস্তার উপর ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখলে যে সকলের অসুবিধা, বলছেন সিউড়ি 8নম্বর ওয়ার্ডের এক গৃহবধূ পাপড়ি সাহা, কলেজ ছাত্রী পূজা মিশ্ররা। উভয়েই বলছেন যে কোনও সময় বিপদ ঘটবে। বলছেন, ‘‘শহরবাসী এবং পুরসভা বিষয়টা যদি একটু দেখেন তাহলে সমস্যা মিটবে।’’
সিউড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মৃণ্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বিষয়টা অবশ্যই পুরসভার দেখভাল করার কথা। সবে বোর্ড গঠিত হয়েছে এখনও সেভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে ইমারতিদ্রব্য রাস্তা জুড়ে ফেলে না রাখা এবং শহরে প্লাস্টিক বন্ধ নিয়ে একটি দাবি ইতিমধ্যেই পুসসভায় তোলা হয়েছে।’’
কী বলছেন সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়?
উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘প্রত্যেক কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, নিজের ওয়ার্ডে ইমারতি সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখলেই যেন বিষয়টি দেখেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সতর্ক করেন। বেশি সময় এমন দ্রব্য পড়ে থাকলে পুরসভা তা বাজেয়াপ্ত করবে এমন সিদ্ধান্তও নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy