বেহাল রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতেই যেন ডোবা। রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের হাল বদলের স্বপ্ন দেখা দুই যুবক প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন। তবে ডাকযোগে নয়। তাঁদের ক্লাবের শারদ পত্রিকায় এলাকার সমস্যার কথা ইংরেজি হরফে ছাপলেন।
রামপুরহাট থানার আদিবাসী প্রধান এলাকা মাসড়া গ্রামের সমস্যার কথা গ্রামেরই দুই যুবকের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠিতে জানালেন। তাঁদের আশা, এই প্রতিবেদন নরেন্দ্র মোদীর হাতে না পৌঁছলেও জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কিছু আধিকারিকের হাতে তো যাবে। তাঁরাও উদ্যোগী হলে সমস্যা মিটতে পারে, এই ভাবনা থেকেই ওই চিঠি লেখার উদ্যোগ।
মাসড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা রীতিমতো ক্রাশার শিল্পাঞ্চল বলা চলে। এখানে ক্রাশারের সংখ্যা কমপক্ষে শ’দুয়েক হবে। সরকার এ থেকে প্রচুর রাজস্বও আদায় করছে। কিন্তু উন্নয়নের আলো এসে পৌঁছচ্ছে না বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান রাস্তাটি একসময়ে পাকা ছিল। কিন্তু এখন পিচ উঠে গিয়ে, পাথর বেরিয়ে গিয়েছে। ওই রাস্তায় শেষ কবে পিচ পড়েছিল বাসিন্দারা স্মরণ করতে পারেন না। তাঁদের অভিযোগ, ক্রাশার মালিকরা ট্রাক নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তার গর্তে পাথরের গুঁড়ো ফেলে যায়। তাতে উল্টে ধুলো উড়ে পথ চলা দায় হয়ে পড়ে।
দিন কয়েক আগে মাসড়া গ্রামের ‘রূপম ক্যালচারাল ক্লাব’ থেকে ‘রূপম সাহিত্য পত্রিকা’ প্রকাশিত হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা দুই স্নাতক যুবক ক্লাবের সম্পাদক বিট্টু সাহা, সহকারী সম্পাদক আরিফ হোসেন ওই পত্রিকায় নিজেদের গ্রামের সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে খোলা চিঠি বলে লিখেছেন। তাঁরা লিখেছেন, গ্রামের রাস্তা খারাপ হওয়ায় বয়স্ক মানুষ, প্রসুতি ও অসুস্থ মানুষজন ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে ভুগছেন। অথচ রাস্তাটি সংস্কারের কাজ গ্রাম সংলগ্ন হস্তিকাঁদা মোড় পর্যন্ত হওয়ার পরে থমকে যায়। অথচ রাস্তাটি হস্তিকাঁদা থেকে ঠাকুরপুড়া পর্যন্ত সংস্কার করার কথা ছিল।
সমস্যা শুধু রাস্তা নিয়েই নয়। সেচেরও সুব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ওই দুই যুবক। গ্রামবাসী মৈনুদ্দিন হোসেন, জিতেনকুমার সাহা, অনুপ সাহা, রেজাউল করিম জানালেন, মাসড়া এলাকা সেচসেবিত না হওয়ায় বৃষ্টির উপরেই চাষাবাস নির্ভর করে। যে বছর বৃষ্টি হয় না, সে বার খুব কষ্টে কাটে বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, গ্রাম থেকে আট কিমি দূর দিয়ে ক্যানাল গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, ক্যানাল থেকে জল নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হলে এলাকার চাষবাসের ছবিটা বদলে যাবে। এলাকার আর্থিক সমৃদ্ধিও ঘটবে।
ওই যুবকেরা জানিয়েছেন, মাসড়া পঞ্চায়েত এলাকায় ৩৩টি গ্রাম রয়েছে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪,৪২০ জন বাসিন্দার মধ্যে আদিবাসী ৮,২০৪ জন, তফসিলি জাতির ২০৪১ জন। তাঁদের আক্ষেপ, জনধন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবন বিমা যোজনা, সুকন্যা সমৃদ্ধি, মুদ্রা ব্যাঙ্ক, দীনদয়াল গ্রাম জ্যোতি যোজনা ইত্যাদি জনমুখী প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কিন্তু গ্রামে ইন্টারনেটের কানেকশনের ব্যবস্থা, বাঙ্কিং ব্যবস্থা, ডাকঘর না থাকায় ওই সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা থেকে গ্রামবাসীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এ সব সমস্যার কথা এতদিন বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে জানানো হয়েছে। এ বার প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লেখা হল। এই পত্রিকা প্রশাসনের বহু আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের হাতে যাচ্ছে। আশাকরি তাঁরা নিশ্চয় আমাদের গ্রামবাসীকে একটু ভাল ভাবে বাঁচার মতো কিছু ব্যবস্থা করবেন।’’
ওই যুবকদের সঙ্গে সহমত রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ফরওয়ার্ড ব্লকের সৌমেন মুর্মুও। তিনি বলেন, ‘‘মাসড়া অঞ্চলে রাস্তাঘাট সংস্কার, ব্যাঙ্ক চালু করা, ডাকঘর প্রভৃতি দরকার। প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।’’
ওই পত্রিকা রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘মাসড়া গ্রামের সেচের সমস্যা দূরীকরণের প্রকল্প ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলিও আগামী দিনে ধীরে ধীরে দূর করা হবে।’’ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘ওই প্রতিবেদন আমি এখনও দেখিনি। তবে যে সমস্ত এলাকায় ব্যঙ্ক নেই, সেখানে ব্যঙ্ক খোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর বাকি দাবিগুলিও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
গ্রামের ছেলেদের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠিকে অবলম্বন করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছে মাসড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy