খদ্দেরের অপেক্ষায় অঞ্জলিরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শুরুতে যেমনটা আশঙ্কা করা হয়ে ছিল, ঘটল তেমনই।
গত সোমবারই রামপুরহাটে ছিল সবলা মেলা। রামপুরহাট মহকুমা স্টেডিয়াম মাঠে মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ভাষণ দিতে গিয়ে মেলাতে বিক্রিবাটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, ‘‘নোট নিয়ে সমস্যা চলছে। এই অবস্থায় মেলায় বিক্রি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।” কেবল বিক্রি নয়, মেলায় যোগদানকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির দৈনন্দিন খরচ কি করে দেবেন সেই নিয়েই বিপাকে পড়েছেন জেলা প্রশাসন। তাতে নিজেদের খুঁটের টাকাতে দিন চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন মমতাজ বেগম, দয়াময় বাগদিরা!
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম জেলা সবলা মেলার জন্য জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতর থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয়ে নোট বদলের নির্দেশের আগেই পাঠানো হয়। মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে সেই চেক যথারীতি রামপুরহাট ট্রেজারি অফিসে জমা দেন। ট্রেজারি অফিস থেকে সেই চেক রামপুরহাটে স্টেট ব্যঙ্কের প্রধান শাখায় জমা পড়ে। রামপুরহাট মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘ওই টাকা মেলার সময় দৈনন্দিন খরচ হিসাবে ব্যাঙ্ক থেকে তুলে মেলায় যোগদানকারীদের যাতায়াত খরচ থেকে খাওয়া খরচ, মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পীদের যাতায়াত খরচ, পারিশ্রমিক বাবদ খরচ করার কথা ছিল। কিন্তু নোট বদল নিয়ে নির্দেশ জারি হওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক ক্যাশের জন্য আরবিআই-এর নির্দেশ লাগবে বলে জানিয়ে দেয়।’’
এরপরেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে।
ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পাওয়ার ফলে আপাতত মেলায় যোগদানকারীরা টিফিন থেকে শুরু করে দিনের ও রাতের খাবার নিজেদের পকেট থেকে খরচ করছেন। মেলায় এমনিতেই বিক্রি বাটা কম। আর কতদিন এই ভাবে নিজেরা পকেট থেকে খরচ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না উষা ভাণ্ডারী, মমতাজ বেগম, দয়াময় বাগদি, অঞ্জলি দাসরা। রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, সবলা মেলায় যোগদানকারী ১৩০ জনের জন্য দৈনন্দিন টিফিন, দুপুরের খাওয়া ও রাতের খাওয়ার জন্য ১২০ টাকা মাথা পিছু খরচ ধরা হয়েছে। প্রতিদিন সেই খরচ নগদ টাকা হিসাবে সবলা মেলায় যোগদানকারীদের দেওয়ার কথা। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পাওয়ার জন্য অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন প্রশাসনও।
দয়াময় বোলপুরের গোপীনাথপুর থেকে এসেছেন। বলেন, ‘‘গতকাল আমার ১০০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। দু’জনে সারা দিনের খরচ তিনশো চলে গিয়েছি।’’ মমতাজ বেগম এসেছেন সিউড়ির ১ ব্লকের ছোট আন্দুলিয়া থেকে। বুটিকের স্টল করেছেন। বলছেন, ‘‘সিউড়ি থেকে আসি। পকেটে হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলাম। এখনও টাকা না পাওয়ায় সেই টাকাও শেষের দিকে। কী হবে জানি না!’’ জেলা প্রশাসন থেকে অবশ্য তাঁদেরকে নগদ টাকা মিললেই বকেয়া খরচ মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি বিভাগের আধিকারিক মৃন্ময় দাস বলেন, ‘‘সবলা মেলার জন্য দফতর থেকে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক দফতরে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক পাঠানো হয়। যত দূর জানি চেক ট্রেজারির মাধ্যমে ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। এর পরর্বতীতে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেটা মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয় বলতে পারবেন।’’
স্টেট ব্যাঙ্কের রামপুরহাট শাখার মুখ্য প্রবন্ধক অরূপ চৌধুরী বলেন, ‘‘মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে জমা দেওয়া পাঁচ লক্ষ টাকা চেকের নগদ টাকা হিসাবে দেওয়ার ব্যাপারে ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলারের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও সদুত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy