প্রতীকী ছবি।
শিক্ষার অধিকার আইন বলছে, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। তাই আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদেরও ভর্তি হতে হচ্ছে সরকারি সাধারণ স্কুলে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকা শিশুদের প্রয়োজন-অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়ার জন্য চুক্তিভিত্তিক ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’রা রয়েছেন। কিন্তু, বাস্তব হল, চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাঁদের নিয়োগ না হওয়া, বেতন কাঠামো সহ নানা ‘বঞ্চনা’-য় আসল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে।
প্রশাসনের তথ্য বলছে, বীরভূমে এই মুহূর্তে ৬৩৩৪ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু সাধারণ স্কুলে পড়ে। তাঁদের জন্য সমগ্র শিক্ষা মিশনের চুক্তিভিত্তিক স্পেশ্যাল এডুকেটরের সংখ্যা মাত্র ৬২ জন। প্রতি চক্রে (সার্কেল অফিস) যেখানে মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্তত তিন জন স্পেশ্যাল এডুকেটর থাকা দরকার, সেখানে কোনও চক্রে এক জন কোথাও আবার দুটি চক্র মিলিয়ে মাত্র এক জন রয়েছেন। জেলার ২৪০০ প্রাথমিক স্কুল, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে ৬০০ স্কুল ও কয়েক’শো শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি শিশুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগই এঁদের তেমন ভাবে নেই। এ ছবি শুধু বীরভূম নয়, গোটা রাজ্যেরই।
সমগ্র শিক্ষা অভিযান সূত্রে জানা গিয়েছে, শারীরিক বিকাশে পিছিয়ে শিশুরা সাধারণ স্কুলে পড়বে সেই ধারণাই ছিল না। ১৯৯৭ সালে যখন ডিপিইপি বা ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি এডুকেশন প্রোগ্রাম চলত, তখন থেকেই প্রতিবন্ধী
শিশুদের শিক্ষাঙ্গনে তুলে আনার ভাবনা নেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রামের আওতায় রাজ্যের ৫টি জেলায় একটি করে ব্লকে বিশেষ প্রশিক্ষক বা এডুকেটর নিয়োগ করে পাইলট প্রোজেক্ট শুরু হয়। সফল হয় সেই ভাবনা। দেখা যায়, চিহ্নিত বেশ কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাধারণ স্কুলে পড়ার উপযোগী করা গিয়েছে।
২০০১-২০০২ সালে প্রতি ব্লকের জন্য তিন জন করে মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্তত তিন জন স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগ হয়। বীরভূমে নিয়োগ হন ১৯টি ব্লকের জন্য ৫৭ জন। কিন্তু, সেই নিয়োগ ছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মারফত। ২০০৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন আসার পরে স্পেশ্যাল এডুকেটরের সংখ্যা বাড়ানোর ভাবনা নেয় সরকার। সেটাও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারফত নয়, সর্বশিক্ষা মিশনের মাধ্যমে। ঠিক হয়, গ্রাম পঞ্চায়েতপিছু এক জন করে স্পেশ্যাল এডুকেটর নেওয়া হবে। তবে সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। জেলায় মোট ৭৬ জনকে নেওয়া হয়েছিল।
৩২টি সার্কেল তাঁদের নিয়োগ করা হয়। সেই সংখ্যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬২তে। প্রকৃত উদ্দেশ্য পালনের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা সেটাই, মানছেন জেলার স্পেশ্যাল এডুকেটররা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একগুচ্ছ অসুবিধাও।
জানা গিয়েছে, সপ্তাহে তাঁদের কাজ ভাগ করা রয়েছে। কিন্তু, এত কম এডুকেটর কী ভাবে এত সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ঘিরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াকে চিহ্নিত করে স্কুলের আঙিনায় নিয়ে আসবেন, সার্কেল লেবেল রিসোর্স সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেবেন, কখন সাধারণ স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ার বাবা-মাকে এ ব্যাপারে সচেতন করবেন সেটাই বড় প্রশ্ন হয়েছে। আরও একটি সমস্যা হল বেতন কাঠামো। প্রতি মাসে এক জন স্পেশ্যাল এডুকেটরের জন্য বরাদ্দ ১২,৫০০টাকা। হাতে আসে ১০ হাজার ৮৯০ টাকা। কোনও যাতায়াতের খরচ দেওয়া হয় না। অধিকাংশ স্পেশ্যাল এডুকেটর ভিন্ন ব্লক, এমনকি কয়েক’শো কিলোমিটার দূরের কোনও চক্রে পোস্টিং হয়ে রয়েছেন।
ওই টাকায় সেখানে কী ভাবে ঘর ভাড়া করে থাকবেন এবং কাজ করবেন সেটাও প্রশ্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্পেশ্যাল এডুকেটররা বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে যে পরিষেবা দেওয়ার জন্য নিয়োগ, সেই দায়িত্ব প্রকৃত ভাবে পালন করতে পারছেন না তাঁরা।’’ ঘটনা যে মিথ্যা নয় তা মানছেন সমগ্র শিক্ষা মিশনের কর্তারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy