Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বৃদ্ধ দম্পতির রহস্য-মৃত্যু

সবে ভোরের আলো ফুটেছে। ঘুম থেকে উঠে গৃহস্থালির কাজে মন দিয়েছিলেন বাড়ির বৌ। আর তখনই তাঁর কানে এল শ্বশুরমশাইয়ের গোঙানি। কিছু ক্ষণের মধ্যে উপরের কোঠায় ছেলে আবিষ্কার করলেন মায়ের প্রায় নিঃসাড় দেহও।

মৃত নিমাই মাল ও কল্পনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র

মৃত নিমাই মাল ও কল্পনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৭
Share: Save:

সবে ভোরের আলো ফুটেছে। ঘুম থেকে উঠে গৃহস্থালির কাজে মন দিয়েছিলেন বাড়ির বৌ। আর তখনই তাঁর কানে এল শ্বশুরমশাইয়ের গোঙানি। কিছু ক্ষণের মধ্যে উপরের কোঠায় ছেলে আবিষ্কার করলেন মায়ের প্রায় নিঃসাড় দেহও।

রবিবার নলহাটি থানার পাইকপাড়া গ্রামের ওই ঘটনায় হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকার কিছু পরেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধ দম্পতির। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন নিমাই মাল (৭৫) ও কল্পনা মাল (৬০)। বাড়ি পাইকপাড়ার উত্তরমালপাড়ায়। চিকিৎসকদের ধারণা, কীটনাশক জাতীয় কিছু খেয়ে মৃত্যু হয়েছে দম্পতির। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। যদিও জীবনের শেষ বয়সে পৌঁছে ওই বৃদ্ধ দম্পতি কেন এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা নিয়ে ধন্ধ তৈরি হয়েছে। তাই ঘটনার নেপথ্যে সব রকম সম্ভাবনার দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অবশ্য ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দম্পতির মৃত্যু-রহস্য কাটবে না বলেই মত তদন্তকারীদের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পাঁচ ছেলেমেয়ের বাবা নিমাই মাল পেশায় ক্ষুদ্র চাষি ছিলেন। বড় ছেলে বেশ কয়েক বছর আগে রোগে ভুগে মারা গিয়েছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাকি তিন ছেলের বিয়ে দেওয়ার পরে নিমাইবাবু স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকতেন। মাস তিনেক আগে নিতাইবাবু মেজ ছেলে, পেশায় গাড়ি চালক প্রদীপের কাছে খাওয়াদাওয়া শুরু করেন। রাতে স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে (যেখানে ছোট ছেলে রণজিৎও থাকেন) শুতে চলে যেতেন। রণজিৎ বলেন, ‘‘রাতে বাবার শরীর খারাপ ছিল। গ্রামের এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ এনে দিয়েছিলাম। সকালে ওঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব বলেও ঠিক হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, রাত ১১টা নাগাদ শুতে চলে গিয়েছিলাম। তাঁর বাবা-মা বাইরের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে পড়েন। সকালে উঠে গৃহস্থালির কাজ করার সময়ে তাঁর স্ত্রী দেখতে পান, শ্বশুরমশাই গোঁঙাচ্ছেন। রণজিৎ বলেন, ‘‘পাশে মাকে শুয়ে থাকতে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করতে থাকি। দেখতে পাই মা উপরের কোঠার মেঝেতে নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছেন।’’ এর পরেই তিনি দাদাদের খবর দেন।

স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে দু’জনকেই নিয়ে পরিবারের লোকেরা রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল ছোটেন। সেখানেই প্রথমে কল্পনাদেবী ও পরে নিমাইবাবুর মৃত্যু হয়। প্রদীপবাবুর দাবি, ‘‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে বাবা কোনও রকমে জানান, সংসার-যন্ত্রণা আর ভাল লাগছিল বলেই ওঁরা কীটনাশক খেয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বা তাঁদের নিয়ে দম্পতির কোনও অশান্তি ছিল না বলেই দুই ছেলের দাবি। ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elderly couple found dead Nalhati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE