Advertisement
২০ মে ২০২৪

ফাঁকি রুখতে স্বাস্থ্য কার্ড

মশা মারতে কেনা হয়েছে নতুন কামান। স্বাস্থ্যকর্মীদের দল তৈরি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে হোর্ডিং। বাঁকুড়া পুরসভার দাবি, মশা নিধনের জন্য যুদ্ধে নামতে প্রস্তুতি পর্ব প্রায় সারা। এখন শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা।

কামান: মশা মারতে বাঁকুড়ার পুরকর্মীদের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

কামান: মশা মারতে বাঁকুড়ার পুরকর্মীদের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৮
Share: Save:

মশা মারতে কেনা হয়েছে নতুন কামান। স্বাস্থ্যকর্মীদের দল তৈরি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে হোর্ডিং। বাঁকুড়া পুরসভার দাবি, মশা নিধনের জন্য যুদ্ধে নামতে প্রস্তুতি পর্ব প্রায় সারা। এখন শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা।

গত বছর জেলা জুড়ে ডেঙ্গির ব্যাপক প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০১৯ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। গত বছর জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন ৪৩৯ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ জনের।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বাঁকুড়া পুরএলাকায় চার জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময়ে বাঁকুড়া পুরসভার এক মাত্র ফগিং মেশিনটিও বিকল হয়ে পড়ায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ফগিং মেশিন নিয়েই কাজ চালাতে হয়েছিল পুরসভাকে। সেই সমস্যা মেটাতে এ বারে আগে ভাগেই দু’টি নতুন ফগিং মেশিন কিনে ফেলেছে পুরসভা। সারানো হয়েছে পুরনো মেশিনটিও। আগামী মাস থেকেই রুটিন মাফিক শহরের ওয়ার্ডগুলিতে ফগিং মেশিন নিয়ে মশা নিধন শুরু হবে বলেই জানিয়েছেন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

এ দিকে সচেতনার কাজেও যাতে ফাঁকি না থাকে সেই জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে পুরসভা। বাঁকুড়া পুরসভার জনস্বাস্থ্য পরিদর্শক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরসভার ২৩০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে সচেতনতার কাজে নামানো হচ্ছে। তাঁরা দু’জন করে ভাগ হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জল দেখবেন এবং বাসিন্দাদের সচেতন করবেন। প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখ এবং ১৬ থেকে ২০ তারিখ— দু’দফায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিদর্শন চলবে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই রুটিন বহাল থাকবে। তিনি জানান, প্রতিটি পরিবারকে একটি করে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হবে। পরিদর্শকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই কার্ডে তারিখ দিয়ে সই করে আসবেন। সুবিরবাবু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য কর্মীরা সমস্ত বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত করতেই এ বার থেকে স্বাস্থ্য কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” বাঁকুড়া পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিন্দ্রশেখর চক্রবর্তী জানান, পুরসভার তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ছ’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ম্যালেরিয়া নির্ণায়ক কিট মজুত রয়েছে। জ্বর নিয়ে কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলে প্রয়োজনে ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

তবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সাফাইয়ের অভাবে নালা বুজে প্রায়ই জল জমে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঝোপঝাড় ও আবর্জনার স্তুপ জমে থাকে বলে অভিযোগ। শহরের বড়কালীতলার বাসিন্দা স্বরূপ কর্মকার, শিখরিয়া পাড়ার বাসিন্দা হরিপদ রজকদের অভিযোগ, “বাড়ির পিছনেই পুকুর রয়েছে। আগাছায় ভরে গিয়েছে পুকুরের পাড়। সেখান থেকে ভন ভন করে মশা ঢোকে ঘরে।” মহাপ্রসাদবাবুর অবশ্য দাবি, পুরসভার নিষেধাজ্ঞার জেরে শহরে প্লাসটিকের ক্যারি ব্যাগ, থার্মোকলের থালার ব্যবহার অনেকটাই কমে গিয়েছে। এতে নালা বুজে যাওয়ার ঘটনা কমেছে। এলাকায় ঝোপঝাড় রয়েছে অভিযোগ পেলেই সাফাইও করে দেওয়া হচ্ছে দ্রুত। তিনি বলেন, “শহরের নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা শহরের কোথাও জল জমছে কি না সেই দিকে সব সময়ে নজর রাখছেন।”

পরিকাঠামো তৈরি হলেও পুরসভা মশা ঠেকাতে কতটা সফল হয় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health card Prevent evasion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE