Advertisement
১৭ মে ২০২৪
বৃষ্টিতে ভাঙল শোভা নদীর সেতু

পাঁচ মিনিটের হঠাৎ ঝড়ে লন্ডভন্ড গ্রাম

এ যেন অকাল কালবৈশাখী। মাত্র পাঁচ মিনিটের ঝড়েই লন্ডভন্ড হয়ে গেল পুরুলিয়া মফস্সল থানার ডিমডিহা গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে মিনিট পাঁচেকের ঝড়ে পুরুলিয়া ১ ব্লকের এই গ্রামে একাধিক বাড়ির চালা উড়ে যায়। উপড়ে পড়ে একাধিক গাছও। বড়বড় গাছ আছড়ে পড়ায় অনেক বাড়ির চালা ভেঙে পড়ে।

জলের তোড়ে ভেঙেছে বাঘমুণ্ডির এই অস্থায়ী সেতু। — নিজস্ব চিত্র ।

জলের তোড়ে ভেঙেছে বাঘমুণ্ডির এই অস্থায়ী সেতু। — নিজস্ব চিত্র ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

এ যেন অকাল কালবৈশাখী। মাত্র পাঁচ মিনিটের ঝড়েই লন্ডভন্ড হয়ে গেল পুরুলিয়া মফস্সল থানার ডিমডিহা গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে মিনিট পাঁচেকের ঝড়ে পুরুলিয়া ১ ব্লকের এই গ্রামে একাধিক বাড়ির চালা উড়ে যায়। উপড়ে পড়ে একাধিক গাছও। বড়বড় গাছ আছড়ে পড়ায় অনেক বাড়ির চালা ভেঙে পড়ে।
এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ আকাশ কালো হয়ে আসে। গ্রামের বাসিন্দা কাজল বক্সী, গোবর্ধন মাহাতোদের কথায়, ‘‘ঝড় খুব বেশি ক্ষণের জন্য হয়নি। কিন্তু ওই মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই লন্ডভন্ড হয়ে গেল গ্রাম।’’ গ্রামের বাসিন্দা রবি সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এত তীব্র বেগে ঝড় এল যে কী হবে যে, বুঝতে পারছিলাম না। চোখের সামনে বাড়ির চালা উড়ে গেল। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের চালাও উড়ে গেল। যার জেরে এ দিন স্কুল করা যায়নি।’’ ঝড়ের দাপটে এমনকী উড়ে যায় পুরুলিয়া-কোটশিলা শাখার গৌরীনাথধাম স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের শেডও! স্টেশন ম্যানেজার অশোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘চোখের সামনে দেখলাম, প্ল্যাটফর্মের চালা উড়ে গিয়ে একশো ফুট দূরে পড়ল।’’
এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আচমকা ঝড়ে ডিমডিহা গ্রামে একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু গাছ পড়েছে। বিদ্যুতের তারও ছিঁড়েছে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে।’’ বিডিও (পুরুলিয়া ১) স্বপনকুমার মাইতি জানান, ঝড়ে প্রায় ৭৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, প্রবল বৃষ্টিতে সোমবার দুপুরে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বলরামপুর-বাঘমুন্ডি সড়কের উপরে থাকা শোভা নদীর বিকল্প সেতু। এই সেতুটি ভাঙায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাঘমুণ্ডির সঙ্গে পুরুলিয়া সদরের যোগাযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অযোধ্যা পাহাড়ে প্রায় সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। আর তার জেরে শোভা নদীতে স্রোত বেড়েছে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই নদীর সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পরে ওই জায়গাতেই নতুন করে সেতু গড়ার কাজ শুরু হয়। সেই কাজ এখনও চলছে। পাশে মাটি ফেলে যাতায়াতের জন্য বিকল্প সেতু তৈরি করা হয়েছিল। জেলা পূর্ত (সড়ক) দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মাটির তলার পাইপগুলি ঠিক থাকলেও উপরের রাস্তাটি ধুয়ে গিয়েছে। জল কমলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ফের রাস্তাটি তৈরি করা হবে।

রবিবার বিকেল থেকে মানবাজার থানার ধানাড়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রবিবার সারাদিন ও রাতে নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, নাগাড়ে বৃষ্টি চলতে থাকলে ধানাড়া থেকে মানবাজার যাওয়ার একমাত্র রাস্তায় কালভার্ট ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। বিডিও (মানবাজার ১) সায়ক দেব বলেন, ‘‘ওই রাস্তার ওপর দিয়ে জল বইলেও যাতায়াতে এখনও সমস্যা হয়নি। তবে অতি বৃষ্টিতে কালভার্ট ও রাস্তার ক্ষতি হয়ে যাতে বড় ধরনের সমস্যা না হয়, সেজন্য পূর্ত (সড়ক) বিভাগের সঙ্গে কথা বলব।’’

ধানাড়া অঞ্চলের লাগদাগোড়া গ্রামের বাসিন্দা তথা মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘‘ধানাড়া পঞ্চায়েত থেকে ৩ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ করে এক মাস আগেই ওই কালভার্ট সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কারের কাজ চলাকালীন স্থানীয় গ্রামবাসীরা আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, ওখানের বিস্তীর্ণ এলাকার জমির জল ওই কালভার্ট দিয়ে বেরোয়। দু’টি পাইপের বদলে তিনটি বসালে জল দ্রুত বেরোবে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের কথা শোনেননি। দু’টি পাইপ বসানোয় বিপত্তি বেড়েছে। জমির জল বেরনোর জায়গা না পেয়ে রাস্তার উপর বইছে। বৃষ্টি টানা হতে থাকলে কালভার্ট ধসে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।’’ ধানাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জলি মুর্মু অবশ্য বলেন, ‘‘কালভার্ট নিয়ে জেলার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী দু’টি পাইপ বরাদ্দ হয়েছিল। আমাদের হাতে বাড়তি অর্থ না থাকায় তিনটি পাইপ বসানো যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Heavy storm Manbazar BDO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE