এমনই রোশনাই দেখা গেল রবিবার রাতে।— সব্যসাচী ইসলাম
নতুন নোটের আকাল চলছে। ঠিক সেই সময়ে লক্ষ টাকা উড়িয়ে আলোর রোশনাইয়ে ভাসল রাতের আকাশ। সৌজন্যে রামপুরহাট পুরসভা। যার সাক্ষী থাকলেন মন্ত্রী, মহকুমাশাসক, পুরপ্রধান থেকে রামপুরহাটবাসী। সিপিএম, বিজেপি-র মতো বিরোধীদের অভিযোগ, শব্দ দানবেরও উৎপাতেও খামতি ছিল না!
দুর্গাপুজো ঘিরে এক মাস দশ দিন পরে রবিবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট পুরসভার উদ্যোগে বিগত কয়েক বছরের মতো এ বছরও শারদ সম্মানের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠানে শহরের প্রতিটি দুর্গাপুজা কমিটিকে সংবর্ধনা দেয় পুরসভা। অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে পুরসভার মাঠে নেতাজি মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আর মাঠের একদিকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে আতসবাজি পোড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা ভেবে পুরসভার মাঠে দমকলের একটি ইঞ্জিনও রাখা হয়েছিল।
পুরসভা সূত্রে জানা যায় আতসবাজির জন্যে এক লক্ষ টাকা সরকারি খরচ দেখানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থানার ফরিদপুর গ্রামের মালাকাররা এই আতসবাজি তৈরির বারত পায়। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, মাসখানেক আগে অগ্রিম হিসেবে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগে বাকি ৮০ হাজার টাকা মেটানো হয়। সেই টাকা ৫০০, ১০০০ টাকার নোটেই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী সাদিকুল শেখ। সাদিকুলের কথায়, ‘‘সেই টাকা ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কে জমা করে দিয়েছি।’’
বিরোধীদের অবশ্য দাবি, শুধু আলোর রোশনাই নয়, দেদার ফেটেছে শব্দবাজিও। পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলর বিজেপি-র শুভাশিস চৌধুরীর কথায়, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী টাকা নেই, টাকা নেই বলে মায়া কান্না কাঁদছেন। আর তাঁরই অনুগত সৈনিকেরা উন্নয়নের টাকা উড়িয়ে বাজি পুড়িয়ে আনন্দ করলেন!’’ পুরসভার আর এক বিরোধী কাউন্সিলর সিপিএমের সঞ্জীব মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘পুরসভা উন্নয়নের টাকায় মোচ্ছব করেছে। তৃণমূলের পুরসভা আসলে উন্নয়নের নামে শহরবাসীকেই ধোঁকা দিল।’’
তবে উন্নয়নের টাকা থেকে ভেঙে বাজি পোড়ানোতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভার পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি। তাঁর জবাব, ‘‘বেঁচে থাকার জন্যে ডাল-ভাত যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন রয়েছে গোলাপফুলেরও।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, এই কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত। অশ্বিনীবাবুর কথায়, ‘‘দেওয়ালির সময় বাজি পোড়ানোর কথা ছিল। পরে সেটা ছটপুজোর সময় করার জন্যে স্থির হয়। তখনও না হওয়ায় শারদ সম্মানের তা করা হবে বলে ঠিক হয়।” তবে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ মানতে চাননি পুরপ্রধান।
পুরপ্রধান যাই বলুক না কেন, পুরবাসীর অনেকেরই অভিযোগ রাত ন’টার পর থেকে অন্তত আধঘণ্টা দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। সে অভিযোগকে আমল না দিয়ে পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘শহরেরই বহু মানুষ আমাকে বলেছেন এ রকম অনুষ্ঠান কোনও পুরপ্রধান করতে পারেননি। তার মানে তো মানুষ আনন্দ পেয়েছে!’’ আগামী বছর থেকে আরও ব়ড় করে বাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠান হবে বলে আগাম ঘোষণা করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy