Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বিজেপি নেতার গায়ে কালি, কর্মী-বিক্ষোভ

এ দিন পুরুলিয়া শহরের নিমটাঁড় এলাকায় দলের জেলা দফতরে পুরুলিয়া বিধানসভা এলাকার সাংগঠনিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

ভিতরে জেলা কার্যালয়ে নেতারা বৈঠকে বসে। বাইরে এক গুচ্ছ অভিযোগ তুলে জেলা সভাপতির অপসারণ চেয়ে দফায় দফায় কর্মীরা স্লোগান তুললেন। এক নেতার গায়ে কালিও লাগিয়ে দেওয়া হল। বৃহস্পতিবার এমনই অন্তর্দ্বন্দ্বের সাক্ষী থাকল পুরুলিয়া জেলা বিজেপি-র কার্যালয়। ক্ষুব্ধ কর্মীরা নিশানা করেন, দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীকে। যদিও বিদ্যাসাগরবাবু বিক্ষুব্ধদের দলের বহিষ্কৃত বা বহিরাগত বলেই দাবি করেছেন।

জেলা বিজেপি-র অন্দরে কোন্দলের ঘটনা নতুন নয়। নিকট অতীতে দলের জেলা দফতরের বাইরে খোদ জেলা সভাপতির কুশপুত্তলিকা দাহ, জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির স্লোগান তুলে শহরের রাস্তায় মিছিল, জেলা দফতরের দেওয়ালে সভাপতির দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত দাবি করে পোস্টারও পড়েছে। পরে অপসারিত হন সেই সভাপতি। দলের রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সাংগঠনিক সভাতেও গোলমাল বেধেছিল।

দল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পুরুলিয়া শহরের নিমটাঁড় এলাকায় দলের জেলা দফতরে পুরুলিয়া বিধানসভা এলাকার সাংগঠনিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। ভিতরে যখন বৈঠক চলছে, সেই সময় বাইরে আচমকা স্লোগান শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দলীয় পতাকা কাঁধে বেশ কয়েকজন ‘দলে টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া হচ্ছে কেন, জেলা সভাপতি জবাব দাও। দলের কর্মীরা মার খাওয়ার পরেও কেন সভাপতি-সহ জেলা নেতৃত্ব নীরব জবাব চাই’ স্লোগান শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। এরপরেই পুলিশ কেন ডাকা হল, তা নিয়ে স্লোগান ওঠে।

অভিযোগ, সেই সময় দলের কার্যালয়ের ভিতরে থাকা এক নেতার মুখে রং মাখিয়ে দেওয়া হয়। হুড়ার দাপাং গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো অভিযোগ করেন, ‘‘টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া হচ্ছে। কর্মীরা মার খাচ্ছেন, অথচ জেলা সভাপতির কোনও হোলদোল নেই।’’ হরি হালদার নামে এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘আমরা বালি, কয়লা পাচার নিয়ে আন্দোলন করতে চাইলে, নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত মিলছে না। ডেঙ্গি নিয়ে দলের আন্দোলন নেই। তারপরে কোন যুক্তিতে সভাপতির পদে থাকেন?’’ কর্মীরা অভিযোগ তোলেন, চাষ মোড়ের একটি দলীয় সভায় কংগ্রেস নেতাদের আবক্ষ মূর্তিতে মালা দেওয়ার জন্য ছয় নেতাকে শো-কজ করা হয়েছিল। দেখা গেল তাঁদের মধ্যে তিন জনকে তাঁদের পদ থেকে সরানো হল, বাকি তিন জন বহাল রইলেন, জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ বলেই কি?

দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সদ্য অপসারিত নগেন্দ্র ওঝা বলেন, ‘‘আমি নিজে গত বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এ দিনের বৈঠকে ডাকা হয়নি। গণ্ডগোল শুনে গিয়ে যাই। শুনেছি এক নেতার মুখে রং মাখিয়ে দেওয়া হয়। তবে কর্মীদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়েছে।’’

জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলের অপসারিত কয়েকজন কিছু বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন দলের জেলা দফতরের বাইরে এই সব করেছেন। তাঁরা বিরোধীদের প্ররোচনায় এ সব কাজ করছেন। সত্যিই দলকে ভালবেসে থাকলে এ ভাবে প্রকাশ্যে দলের সম্মানহানি করত না।’’ টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়ার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘জেলা কমিটি কোনও পদাধিকারীর নাম সুপারিশ করে মাত্র। তা অনুমোদন দেয় রাজ্য নেতৃত্ব।’’ দলের আরেক সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো বলেন, ‘‘এক জনের ছোড়া ডিমের গায়ে লাগানো কালি আমার গায়ে লেগেছে। আমাদের পুরো দলকেই হেনস্থা করতে পথে নেমেছে কিছু লোক।’’

তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ। বিজেপিকে আমরা কোনও প্রতিপক্ষই মনে করছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ink BJP Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE