প্রাচীন প্রতিমা। —সোমনাথ মুস্তাফি
জমিদারি নেই, কিন্তু আজও জমিদারি প্রথা মেনে কীর্ণাহারের সরকার বাড়িতে জগদ্ধাত্রী রূপে পূজিত হন মান সিংহের গৃহদেবী।
এলাকার জনশ্রুতি, সম্রাট আকবর তিনবার মান সিংহকে অবিভক্ত বাংলার শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। সে সময় মান সিংহের রাজস্থানের বাড়িতে দেবী হিসাবে পূজিত হতেন। তখন দেবীর ছিল অষ্টধাতুর মূর্তি রূপে। একবার দিন ইলাহি ধর্ম নিয়ে সম্রাটের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন মান সিংহ। তখন তাঁর কুলদেবীর পুজো নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। পুজো চালু রাখার জন্য মান সিংহ একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের খোঁজ করতে থাকেন। কীর্ণাহারের তৎকালীন জমিদার কিশোরকুমার সরকারের নাম জানতে পারেন তিনি। তারপরেই পিতলের সিংহাসন-সহ সালঙ্কারা গৃহদেবীকে পুজোর জন্য তুলে দেন কিশোরকুমারের হাতে। সেই থেকে আজও সরকার বাড়িতেই ইষ্টদেবী রূপে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে অষ্টধাতুর সেই মূর্তির।
এত বছরের পুজো— সে পুজো ঘিরে জমিদার বাড়ির নতুন প্রজন্মেরও উৎসাহের অন্ত নেই!
এই সেই সিংহাসন।—সোমনাথ মুস্তাফি
প্রামাণ্য কোনও নথি থাক বা নাই থাক সিংহাসন, গহনা এবং মূর্তির গড়নই মানসিংহের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে বলে মনে করেন সরকার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে রাজস্থানী ঘরানার ছাপ। ৮৪ বছরের সন্ধ্যারানী সরকার, ৭৬ বছরের প্রিয়া সরকাররা জানান, পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, পুজো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় মানসিংহ তাঁর কুলদেবীকে কিশোরকুমারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই থেকে আমাদের ইষ্টদেবী হিসাবে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো হয় দেবীর।
পুজোর আচারেও রয়েছে বিশেষত। বেশিরভাগ জায়গায় দুর্গার মতোই চারদিন জগদ্ধাত্রী পুজোর চল থাকলেও সরকার বাড়িতে একদিনেই তিন প্রহরের পুজো হয়। সারা বছর দেবী কাঠের সিংহাসনে বিরাজ করেন। পুজোর দিনই তাকে বসানো হয় মানসিংহের দেওয়া সেই পিতলের সিংহাসনে। সিদ্ধার্থ সরকার, বিবেকানন্দ সরকাররা জানান, ইষ্টদেবী হিসাবে জগদ্ধাত্রীকে সারা বছর নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। কারণ পরিবারের রাধা-বিনোদের সঙ্গে একই হেঁসেলে তারও ভোগ রান্না হয়। কিন্তু পুজোর দিন তার জন্য আলাদা হেঁসেলে মাছ-সহ অন্নের ভোগ রান্না করা হয়।
জমিদার বাড়িতে দুর্গা-কালী-সহ অন্যান্য পুজো থাকলেও জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকেন প্রীতম সরকার, পন্ডিচেরীতে থাকেন অলোক সরকাররা।
তাঁরা জানান, কোনওবার দুর্গাপুজোতে বাড়ি ফেরা না হলেও চলে। কিন্তু জগদ্ধাত্রী পুজোতে ফিরতেই হয়। কারণ ওইসময়ই সবাই ফেরেন। কলকাতায় থাকেন অর্চনা সরকার, পূর্ণিমা সরকাররা। তাঁরা জানান, সবার সঙ্গে দেখা হয় বলে আমরাও সারা বছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় বাড়ি ফেরার জন্য প্রতীক্ষায় থাকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy