সাজ: তারাপীঠে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
বণিক জয়দত্ত সদাগর তারাপীঠে প্রথম মন্দির প্রতিষ্ঠা করে আশ্বিন মাসের চতুর্দশী তিথিতে পুজো ও ভোগের প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে এই দিন মা তারার আবির্ভাব উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয় তারাপীঠে। বুধবার সেই আবির্ভাব উৎসব ঘিরে প্রাচীন রীতি অনুসারে মা তারাকে মূল মন্দির থেকে মন্দির চত্বরে ‘বিরামমঞ্চ’ বা বিশ্রাম মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। এবং পশ্চিমের শ্মশানের দিকে মুখ করে রাখা হয়।
তারা মাতা সেবাইত সমিতির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় জানান, ভোরে স্নান করিয়ে মা তারাকে বিরাম মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। বিরাম মঞ্চে এ দিন মাকে রাজবেশে সাজানো হয়। দর্শনার্থীদের জন্য দিনভর পূজার্চনা হওয়ার পরে সন্ধ্যা আরতি হয়ে পুনরায় মূল মন্দিরে অভিষেক ও স্নান করানো হয়। সেখানে আবার আরতি হয়ে রাতে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। এ দিন দিনের বেলায় মায়ের কোনও অন্নের ভোগ হয় না। সেই জন্য দিনের বেলায় তারাপীঠের সেবাইতদের ঘরে কোনও অন্নরান্না হয় না। লুচি-মিষ্টি নারকেল নাড়ু, বিভিন্ন ফলের ভোগ নিবেদন করা হয়।
তারা মাতা সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানালেন, মা তারাকে এ দিন পশ্চিম দিকে মুখ করে রাখার কারণ। কথিত আছে, পশ্চিম দিকে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার মলুটিতে ‘মা মৌলিক্ষা’ যিনি মা তারার ছোট বোন, তিনি অবস্থান করেন। বছরের এই একটি মাত্র দিনের গোটা সময় মা তারাকে সেই ছোট বোনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পশ্চিম দিকে আনা হয়। প্রাচীন এই রীতিকে ঘিরে কথিত আছে, ‘নাটোরের খান, আর নানকারের দিকে চান’। অর্থাৎ, নাটোরের রানীর রাজপাটে মা তারা সারাবছর বসে থেকে সেখানেই ভোগ, অন্ন খান। আর কেবল একটা দিন মা তারা নানকার রাজপাটে অবস্থিত মা মৌলিক্ষার দিকে চেয়ে থাকেন। নানকার ঝা়ড়খণ্ডে অবস্থিত একটি মৌজা।
চতুর্দশী তিথিতে তারাপীঠের আশপাশের এলাকা থেকে পারিবারিক দুর্গাপুজার কর্তারা মা তারার কাছে মানসিক পুজো নিবেদন করতে আসেন। সেই জন্য এই তিথি ঘিরে তারাপীঠ এলাকায় বছর কুড়ি আগেও মেলা বসত। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের মা তারার দর্শনার্থীরা এই দিনে গরুর গাড়ি করে পুজো দিতে আসতেন। এখন আর তারাপীঠে চতুর্দশীর মেলা বসে না। সেই মেলার কথা মনে করে আজও মন কেমন করে শহরের অনেক প্রবীণেরই।
তবুও চতুর্দশী তিথি ঘিরে এখনও পারিবারিক পুজোর কর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা মায়ের দর্শন পেতে তারাপীঠে ভিড় করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy