পুরস্কৃত: মনোজ। নিজস্ব চিত্র
দামী মোবাইল ফোন কুড়িয়ে পেয়ে শিক্ষকদের হাতে জমা দিয়ে নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল লাজুক স্বভাবের ছেলেটি। সেই মোবাইল ফেরত পেয়ে স্কুলের সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন মালিক। আর শুক্রবার পুরস্কৃত করলেন অবর স্কুল পরিদর্শক।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে ছুটির পরে বাড়ি যাওয়ার পথে স্কুল গেটের সামনে একটি দামী মোবাইল কুড়িয়ে পায় সাঁইথিয়ার মৃতদাসপুর প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মনোজ দাস। মোবাইলটি সে শিক্ষকদের হাতে তুলে দেয়। শিক্ষকেরা মোবাইল ফোন ঘেঁটে মালিকের পরিচয় উদ্ধার করেন। তার পর সেটি তুলে দেওয়া হয় সেই মালিকের হাতে। দামী মোবাইল ফেরত পেয়ে মালিক স্কুলের সমস্ত ছেলেদের মিষ্টি খাওয়ান। সংবাদমাধ্যমে তা প্রকাশিত হতে ধন্য ধন্য পড়ে যায় এলাকায়। অনেকেই মনোজকে অভিনন্দন জানান।
অভিনন্দন জানাতে এ দিন স্কুলে হাজির হন সংশ্লিষ্ট আমোদপুর চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক তপোব্রত দে। ওই স্কুল তো বটেই, সেখানে তখন হাজির লাগোয়া আপার প্রাইমারির পড়ুয়া এবং শিক্ষকরাও। সবার সামনেই স্কুল পরিদর্শক মনোজের হাতে তুলে দেন একটি অভিধান-সহ কিছু বই ও পেন। বাকি সবার হাতে তুলে দেওয়া হয় চকোলেট।
মনোজের পুরস্কৃত হওয়ার ঘটনা অনুপ্রাণিত করেছে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদেরও। চকোলেট হাতেই তৃতীয় শ্রেণির বৃষ্টি মণ্ডল এবং সুজিত কিস্কুরা বলে, ‘‘কোনও জিনিস কুড়িয়ে পেয়ে ফেরত দিলে যে সবার এত ভালবাসা পাওয়া যায়, তা জানতাম না। খুব ভাল লাগছে।’’
ছেলের পুরস্কার নেওয়ার আনন্দঘন দৃশ্যটি অবশ্য দেখা হয়নি বাবা হিরু দাস এবং মা ঝর্না দাসের। স্থানীয় হরিহরপুর গ্রামে তাঁদের অভাবের সংসার। দিনমজুরির আয়েই কোনও রকমে চলে তাঁদের পাঁচ সদস্যের পেট। তাই ছেলের পুরস্কার পাওয়ার কথা জেনেও তাঁকে এ দিনও মজুর খাটতে যেতে হয়েছিল। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অভাবের সংসারে অনেক কিছুই নেই। কিন্তু ছেলে লোভ জয় করে মোবাইল ফেরত দিয়ে সবার কাছে যা প্রশংসা পেয়েছে, তাতেই আমাদের ওই সব ঘাটতি পূরণ হয়ে গিয়েছে।’’
কথা বলার মতো অবস্থায় ছিল না মনোজ নিজে। আবেগ আপ্লুত গলায় সে বলে, ‘‘মোবাইলটা ফেরত দেওয়ার পর থেকে সবাই ভালবাসছে। এর পর যখনই যা পাবো ফেরত দেব। তা হলে সব সময়ই সবার ভালবাসা পাবো।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দুই সহকারি শিক্ষক অরুণ মণ্ডল এবং স্বপন মণ্ডলরা বলেন, ‘‘মনোজের জন্য আমাদের স্কুল গর্বের জায়গায় পৌঁছচ্ছে। সব ছাত্রছাত্রী এর পর ওকে দেখে শিখবে। আমাদের শিক্ষা সার্থক হবে।’’
অন্য দিকে তপোব্রতবাবু বলেন, ‘‘পুরস্কারটা প্রতীকী। আসলে ওই ছেলেটির মতোই অন্যান্য পড়ুয়াই শুধু নয়, তাদের অভিভাবকেরাও যাতে এমন করে লোভ জয় করে অন্যের জিনিস ফিয়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা অর্জন করতে পারে, তার জন্যই এই উদ্যোগ।’’
গর্ব নিয়ে বাড়ি ফিরল মনোজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy