পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন স্থানীয় যুবকেরা। নিজস্ব চিত্র।
সাতসকালে জলাধারে চলে আসছেন তাঁরা। কেউ যেচে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন আশপাশের অজানা জায়গাগুলি। কেউ পিকনিক করতে আসা লোকজনের কাছে গিয়ে অনুরোধ করছেন, আবর্জনা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে। বেলা পড়ে এলে সে সব পরিষ্কার করে, তার পরে ফির ঘরে। অমর মাহাতো, শান্তু মুড়ার মতো পুরুলিয়ার কোটশিলার মুরগুমা সেবা সঙ্ঘের পঁচিশ জন সদস্য পর্যটন মরসুমে এ ভাবেই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে চলেছেন। ওই যুবকদের প্রায় সবাই কৃষিজীবী। অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বা স্নাতক। পর্যটকদের কাছে তাঁদের পরিচিতি হয়েছে ‘বিনা পয়সার গাইড’ হিসাবে।
কলকাতা থেকে এই প্রথম সপরিবার পুরুলিয়ায় এসেছেন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। নতুন বছরের প্রথম দিন গিয়েছিলেন মুরগুমা জলাধারে। গাড়ি থামতেই ওই যুবকেরা এসে হাজির। জানালেন, আপত্তি না থাকলে চারপাশ ঘুরিয়ে দেখাতে পারেন। কোনও টাকা লাগবে না। গোড়ায় খটকা লেগেছিল রবিরঞ্জনবাবুর। সাত-পাঁচ ভেবে রাজি হয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘অল্প সময় নিয়ে এসেছিলাম। এত কিছু দেখার আছে, ধারণা ছিল না। শেষে ওদের ক্লাবের জন্য কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিছুতেই নিল না। বলল, তার বদলে যেন আবার আসি।’’
স্থানীয় কিছু বাসিন্দা জানান, বছর চারেক ধরে পিকনিকের মরসুমে মুরগুমা জলাধারের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজ করে চলেছেন ওই যুবকেরা। পর্যটকদের কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে, সাহায্যে এগিয়ে যান। পরে আশপাশ ঘুরিয়ে দেখানোও শুরু করেছেন।
১৯৬৫ সালে মুরগুমা জলাধার নির্মাণ শুরু হয়। শেষ হয় বছর সাতেকে। পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে অনেক পরে। ঝালদার দিক থেকে তখন মুরগুমায় যাওয়া যেত। কিন্তু অযোধ্যা পাহাড় থেকে যাওয়ার কোনও রাস্তা ছিল না। গত এক দশকে সে সমস্যার সুরাহা হয়েছে।
অযোধ্যা পাহাড়ে এসে ১৯ কিলোমিটার দূরের মুরগুমায় ঢুঁ দেন অনেকেই। ‘ভিউ পয়েন্ট’-এ দাঁড়ালে দেখা যায় ছোট-বড় পাহাড়ের মাঝে নীল জল, ঘন জঙ্গল। কিন্তু সাতনালা ঝর্না, কেনেকেচে পাহাড়ের চুড়োয় পুরনো মন্দির, তার কাছের গুহার খোঁজ রাখেন না সবাই। সে সব জায়গা ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠছে ‘বিনা পয়সার গাইড’দের দৌলতে। তাঁদের মধ্যে রঞ্জিত তন্তুবায় বলেন, ‘‘আগামী দিনে জলাধারে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে এলাকারই সুনাম হবে। তাই সাধ্যমতো সবাইকে সাহায্য করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy