ছবি: সংগৃহীত
জেলার মধ্যে রানিবাঁধে অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা সর্বাধিক (৮৮)। তা নিয়ে জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস রুষ্ট। কিন্তু শুধু রানিবাঁধেই নয়, জঙ্গলমহলের অন্য কয়েকটি ব্লকেও অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগের। বাঁকুড়া শহর থেকে কৃষি প্রধান ও শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত এলাকাতেও সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।
যদিও জেলা প্রশাসনের একাংশের দাবি, একে কর্মী সঙ্কট। তার উপরে পরিকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। তারই মধ্যে নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বলেন, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে নতুন করে কর্মী নিয়োগ চলছে। অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কমাতে আমরা জেলা জুড়ে একদিকে যেমন প্রচার চালাচ্ছি, তেমনই ওই শিশুদের উপর আলাদা ভাবে নজরও রাখছি। আমাদের লক্ষ্য জেলা থেকে অপুষ্টি পুরোপুরি দূর করা।”
জেলা শিশুকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত অক্টোবর মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলায় অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা এক হাজার ১৯। গত বছরে ছিল এক হাজার ৮৫৫। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ এই সংখ্যা ছিল তিন হাজার ২২৭। দু’বছরের মাথায় সংখ্যাটা দু’হাজারের বেশি কমিয়ে আনাও কম সাফল্য নয় বলে দাবি করছেন আধিকারিকেরা।
প্রশাসনি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকেই রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে অপুষ্ট শিশুদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে তাদের খাবারে। ওই বছর থেকেই চালু করা হয় ‘পুষ্টি লাড্ডু’। ময়দা, ছোলা, বাদাম ও চিনির মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে পুষ্টিকর ওই লাড্ডু। পুষ্ট শিশুদের খাবার হিসেবে ওই লাড্ডু বানানোর জন্য বরাদ্দ ২ টাকা ৮০ পয়সা। সেখানে অপুষ্ট শিশুদের জন্য বরাদ্দ চার টাকা। ফলে অপুষ্ট শিশুদের অনেক বেশি মাত্রায় ওই আহার দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি গর্ভবতী ও সদ্য মা হওয়া মহিলাদের সংখ্যাও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে বেড়েছে গত এক বছরে। প্রশাসনের দাবি, গর্ভবতী অবস্থায় ও সদ্য মা হওয়ার পরে মহিলাদের পুষ্টিকর আহার দেওয়া খুবই জরুরি। তাই তাঁদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়ে আসতে প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন মহলে প্রচার চালানো হয়েছিল। এ ছাড়া জেলাশাসকের নির্দেশে গত এক বছর ধরে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতে মাসে একবার করে এলাকার অপুষ্ট শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এর ফলে কোনও শিশু দীর্ঘদিন ধরে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগলে তাকে চিহ্নিত করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। প্রশাসনের দাবি, এর ফলে শিশুরা দ্রুত অপুষ্টি কাটিয়ে উঠছে।
এত কিছুর পরেও অবশ্য দফতরের পরিকাঠামো সীমিত হওয়ায় কিছু জায়গায় ফাঁকফোঁকর রয়েই যাচ্ছে বলে মানছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। মূলত কর্মী সঙ্কট এই মুহূর্তে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলিতে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮৪। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রয়েছেন পাঁচ হাজার ১৭২ ও সহায়িকা রয়েছেন চার হাজার ৫৩২। যার ফলে বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই স্থায়ী কর্মী বা সহায়িকা নেই। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলি পরিচালনা করেন সুপারভাইজ়ারেরা। জেলায় ২৫৮ জন সুপারভাইজ়ার থাকার কথা, রয়েছেন ৬৯ জন। এছাড়া মেজিয়া, হিড়বাঁধ ও বাঁকুড়া শহরে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিকও (সিডিপিও) নেই। ফলে নজরদারিতে কিছুটা হলেও ফাঁক যে থেকে যাচ্ছে, অস্বীকার করতে পারছেন না আধিকারিকেরা। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ মানছেন, কর্মী সঙ্কট থাকার ফলে পরিষেবা সচল রাখতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কবে হবে অপুষ্টি-শূন্য জেলা, অপেক্ষায় সবাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy