—ফাইল চিত্র।
জেলা সফরে এসে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনায় বসতে পারেন। এমনটাই জানাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এতে জেলার নার্সিংহোমগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী রোগী ও তাঁদের পরিজনদের প্রতি আরও মানবিক আচরণ করতে পরামর্শ দেবেন বলে স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন।
মাত্রাতিরিক্ত বিলের বোঝা রোগীর পরিবারের উপর চাপিয়ে দেওয়া, দরিদ্র রোগীদের স্বাস্থ্যকার্ড থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করে নগদে বিল নেওয়ার মতো অভিযোগ নানা সময়ে ওঠে নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে। মাস খানেক ধরে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্য জুড়েই। খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের ঘটনা রুখতে কড়া পদক্ষেপ করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়ায় ঢুকছেন মঙ্গলবার। বুধবার প্রশাসনিক সভা ও বৈঠক সেরে তাঁর পুরুলিয়ায় যাওয়ার কথা। পরের দিন সেখানে বৈঠক ও সভা করবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার বাঁকুড়ায় ও বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় নার্সিংহোম মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
এতদিন জেলা সফরে এলে মুখ্যমন্ত্রীকে সাধারণত প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসতেন। এ বারই সেই সঙ্গে জেলার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে বৈঠকে ডাকা হচ্ছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, মুখ্যমন্ত্রীর নজর যে শুধু কলকাতা নয়, জেলার নার্সিংহোমগুলির উপরেও রয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে। সামগ্রিক ভাবেই রাজ্যের সর্বত্র তিনি নার্সিংহোমে যাওয়া মানুষজন যাতে ঠিকঠাক পরিষেবা পান এবং বিল মেটাতে যাতে নাকাল না হন, তা তিনি চাইছেন।
ওই বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে দুই জেলার স্বাস্থ্য দফতরই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “জেলার নার্সিংহোম গুলিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” পুরুলিয়ার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত জানান, মুখ্যমন্ত্রীর আসন্ন বৈঠক নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁরা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে এক প্রস্থ আলোচনা করেছেন।
বাঁকুড়া জেলায় কমবেশি ৫২টি ও পুরুলিয়ায় ২১টি নার্সিংহোম রয়েছে। সাম্প্রতিক ক্ষেত্রে দুই জেলার নার্সিংহোম গুলি নিয়ে মারাত্মক কিছু অভিযোগ না উঠলেও ছোটখাটো অভিযোগ উঠছেই। খাস বাঁকুড়া শহরেই নগদে বিল না মেটানোয় এক দুঃস্থ রোগিণীকে ছুটি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কয়েক সপ্তাহ আগে। ওই রোগিণীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে বিল নেওয়া হয়নি। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে ঘটনাটি মালিকের নজরে আসায় কার্ড থেকে বিল নেয় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। একই অভিযোগ হামেশাই ওঠে জেলার বহু নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও। মুখ্যমন্ত্রী মধ্যস্থতায় এই সমস্যা মেটে কিনা তাই দেখতে মরিয়া জেলার সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাচ্ছেন শুনে খুশি নার্সিংহোম মালিকদের একাংশও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একটি নার্সিংহোমের কর্ণধারের কথায়, “মাস খানেক ধরে রাজ্যের বিভিন্ন নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে যে ভাবে হামলা চলছে, তাতে আমরাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। এই সব সমস্যা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চাই।” বাঁকুড়ার নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নীলাঞ্জন কুণ্ডু বলেন, “সরকারি ভাবে এখনও বৈঠকের চিঠি পাইনি। তবে শুনেছি মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোন সমস্যাগুলি তুলে ধরব তা নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছি।”
বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “নার্সিংহোমে গিয়ে যাতে রোগীরা সমস্যায় না পড়েন, সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে সবারই ভাল হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy