Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
বালি পাচারে যুক্ত থাকার নালিশ

অনশন মঞ্চ থেকেই ধৃত

বেআইনি বালি খাদান বন্ধের দাবিতে অনশনে বসেছিলেন গ্রামবাসী। সেই অনশন মঞ্চ থেকেই এক ব্যক্তিকে বালি পাচার চক্রে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিশ। আর এই ঘটনাকে ঘিরেই মঙ্গলবার তেতে উঠল বড়জোড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৫
Share: Save:

বেআইনি বালি খাদান বন্ধের দাবিতে অনশনে বসেছিলেন গ্রামবাসী। সেই অনশন মঞ্চ থেকেই এক ব্যক্তিকে বালি পাচার চক্রে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিশ। আর এই ঘটনাকে ঘিরেই মঙ্গলবার তেতে উঠল বড়জোড়া। গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে থানায় গিয়েছিলেন গ্রামবাসী। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁদের উপরে হামলা চলল। একটি অংশের অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূলের লোকজন বলে পরিচিত। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব ঘটনাটি জনরোষ বলে পাল্টা দাবি করেছেন।

দামোদর নদ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার জেরে বড়জোড়ার বড়মানা এলাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার থেকে অনশনে বসেছেন গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, বেআইনি বালি খাদান বন্ধ করতে পুলিশ ও প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। অনশনের মাঝেই বড়জোড়া ও মেজিয়া থানার পুলিশ পৃথক পৃথক ভাবে অভিযান চালিয়ে বালি পাচার চক্রে জড়িত অভিযোগে ন’জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনার পরের দিনই বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর ) অসীমকুমার বালা ও বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব সেখানে গিয়ে অনশন তুলতে বলেন। অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা তাঁদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এরই মধ্যে সোমবার মাঝরাতে অনশন মঞ্চ থেকেই গুরুপদ শিকদার নামের এক গ্রামবাসীকে বালি পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, বালি পাচার চক্রে ধৃতদের জেরা করে জানা যায়, গুরুপদ নিজের ট্রাক্টরে বালি পাচার করত। যদিও গ্রামবাসীর পাল্টা দাবি, গুরুপদকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে।

প্রতিবাদ জানাতে এ দিন প্রায় ৭০ জন গ্রামবাসী বড়জোড়া থানায় যান। অনেক মহিলাও ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ফিরে আসার সময় বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা রড, টিউবলাইট ও লাঠি নিয়ে তাঁদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়।

আক্রান্তদের মধ্যে প্রশান্ত মণ্ডল, মনোজ শিকদার, মিনতি শিকদারদের অভিযোগ, “আমাদের উপরে হামলা চালায় তৃণমূলের লোকেরা। ঢিল ছোড়া দূরত্বে থানা। কিন্তু একজন পুলিশও আমাদের বাঁচাতে এল না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের মার খেতে দেখেও সিভিক ভলান্টিয়াররা রা কাড়েনি।” তাঁদের অভিযোগ, হামলায় গ্রামবাসীদের অনেকেই জখম হয়েছেন। অনশন মঞ্চের আহ্বায়ক ননী রায় বলেন, “প্রশাসনের উপর আমাদের বিশ্বাসটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হলেও সেখানে তৃণমূলের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালাবে না এই নিশ্চয়তা কে দেবে?’’ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা।

তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্রবাবু দাবি করেছেন, “বালি পাচার চক্রে জড়িত ব্যক্তিকে ছাড়াতে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন ওঁরা। তাই স্থানীয় মানুষই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বললে তো জনরোষ আছড়ে পড়বেই।” বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “গ্রামবাসীরা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। বাসের যাত্রীরা বাস থেকে নেমে ওঁদের সরিয়ে দিয়েছেন।” বেআইনি বালি খাদান বন্ধের দাবিতে গ্রামবাসীর একটানা অবরোধ ও এ দিনের ঘটনার পিছনে সিপিএম ও বিজেপির উস্কানি রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন সৌমিত্রবাবু। বড়মানায় গ্রামবাসীদের অনশন মঞ্চের অদূরেই তৃণমূলের তরফেও একটি অনশন বিরোধী মঞ্চ গড়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকারের প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূল নেতারা বালি মাফিয়াদের পক্ষ নিচ্ছেন না তো?’’ আর সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী দাবি করছেন, “তৃণমূলের এই হামলা বালি মাফিয়াদের সঙ্গে তাদের যোগসাজস প্রকাশ্যে এনে দিল।”

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Trafficking Hunger Strike Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE