চলছে উদ্ধারকাজ। নিজস্ব চিত্র
তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আঁকড়ে ধরেছিলেন প্রায় পঁচিশ ফুট উঁচু খুঁটি। সেখানেই প্রায় ১৫ মিনিট ঝুলে রইলেন বছর পঁয়ত্রিশের ঠিকা শ্রমিক। নীচে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করলেন অনেকে। শেষে স্থানীয় এক যুবক খুঁটি বেয়ে উঠে উদ্ধার করেন ওই শ্রমিককে। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ আদ্রা স্টেশন সংলগ্ন বাজারের ঘটনা।
ওই জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে রেল। রেলের একটি সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন থাকা অবস্থায় বিদ্যুতের খুঁটিতে মেরামতির কাজ করছিলেন মনভুলা বাউড়ি নামের আদ্রা শহরের বাসিন্দা ওই ঠিকা শ্রমিক। কিন্তু তিনি জানতেন না কোনও ভাবে তার বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে গিয়েছে। তারে হাত পড়তেই বিদ্যুতের ঝটকা লেগে খুঁটির উপরেই ঝুলে পড়েন। প্রায় ১৫ মিনিট ওই ভাবে থাকার পরে উদ্ধার করেন স্থানীয় যুবক পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কুন্দন লাল। মনভুলা এখন আদ্রা রেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
মনভুলা বলেন, ‘‘আমি ঠিকা শ্রমিক। এ দিন আরও দু’টি খুঁটিতে কাজ করেছি। তৃতীয় খুঁটিতে উঠে কিছুক্ষণ কাজ করার পর ঘটনাটি ঘটে। একটা তার হাত লাগার পরেই বিদ্যুতের ঝটকা লাগে। আমি ঝুলে পড়ি। বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকি।’’ কুন্দনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি বিদ্যুতের খুঁটির উপরে এক জন বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। নীচে অনেকে মোবাইলে ছবি-ভিডিয়ো তুলছে। কেউই তাকে নামানোর চেষ্টা করছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই শুনে খুঁটিতে উঠেছিলাম।”
কী ভাবে ওই তার বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে উঠেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলের বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতরের ইলেকট্রিক ইনচার্জ দীপক মাজি।
মনভুলা যে বিদ্যুতের খুঁটিতে চড়ে কাজ করছিলেন তার উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। রেলের বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ‘নর্থ সেটেলমেন্ট’ এলাকায় স্টেশনের পাশে বিদ্যুতের খুঁটিগুলিতে মেরামতির কাজ চলছিল। মনভুলাকে নিয়ে কাজ করছিলেন বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতরের দুই কর্মী। তাঁদের এক জন মনোজ কুমারের দাবি, ‘‘মনভুলা তৃতীয় খুঁটিতে ওঠার আগে আর এক কর্মী ট্রান্সফর্মার থেকে ওই খুঁটির তারের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করেছিলেন। ফোনে সে কথা মনভুলাকে জানানোর পরেই তিনি খুঁটিতে উঠেছিলেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘খুঁটির উপরে কিছু সময় মেরামতির কাজ করার পরে কোনও ভাবে তারে বিদ্যুৎ চলে এসেছিল। এর পরেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মনভুলা।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পরে অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে প্রায় ১৫ মিনিট ওই ঠিকাকর্মী বাতিস্তম্ভে ঝুলে ছিলেন। পড়ে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। অভিযোগ, মনভুলাকে ঝুলতে দেখেও রেলের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি। যদিও মনোজবাবুর দাবি, তাঁরা প্রথমেই অফিসে ফোন করে ঘটনাটি জানিয়ে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করতে বলেছিলেন। তাতে কিছু সময় লেগে যায়।’’ ওই সময় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন কুন্দন। নিয়ম অনুযায়ী, হেলমেট ও ‘সেফটি বেল্ট’ পরে বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ করতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সেগুলি কিছুই ছিল না ওই শ্রমিকের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy