ধার দিয়ে সেই টাকা ফেরত চেয়েছিলেন ইটভাটার মালিক। টাকা তো ফেরত দেওয়াই হয়নি। উল্টে কেন বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে, সে ‘অপরাধে’ বেধড়ক মারধর করে জলে বিষ মিশিয়ে খুন করা হয়েছিল সেই পাওনাদারকে। ছ’বছর আগের ছাতনা থানার সেই খুনের মামলায় দুই ছেলে-সহ বাবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল।
শুক্রবার বাঁকুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (৩) সুকুমার সূত্রধর এই রায় দেন। আসামিরা হল মনবোধ মাজি এবং তার দুই ছেলে প্রশান্ত মাজি ও সুশান্ত মাজি। তাদের বাড়ি ছাতনার বনগ্রামে। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ইটভাটার মালিক গোবর্ধন মাজিকে খুনের অপরাধে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ধার্য করেন বিচারক। অনাদায়ে আরও একবছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তিনি।
সরকার পক্ষের আইনজীবী রূপক ভট্টাচার্য জানান, গোবর্ধনবাবু অভিযুক্তদের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা পেতেন। তিনি ওই টাকার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন। তার জেরেই এই খুন। ২০১০ সালের ৮ অগস্ট সকালে গোবর্ধনবাবুকে পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিজেদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় ওরা। সেখানে টাকা না দিয়ে উল্টে বেধড়ক মারধর করে ওই তিনজন। খবর পেয়ে গোবর্ধনবাবুর মা শেফালি মাজি ছেলেকে বাঁচাতে সেখানে ছুটে যান। তাঁকেও রেয়াত করা হয়নি। ওই তিনজনে শেফালিদেবীকেও বেধড়ক মার খান। এ দিকে, মারধরে গুরুতর আহত গোবর্ধনের নাক-মুখে দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। সেই সময় তিনি জল খেতে চান। কিন্তু তখনও তার সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করা হয়। জলের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়।
এ দিকে গোলমালের খবর পেয়ে গ্রামবাসী সেখানে জড়ো হলে, ওই তিন জন বাড়ি ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে গোবর্ধনের মামা কার্তিক মাজি ভাগ্নে ও দিদিকে উদ্ধার করে গৌরাঙ্গডিহি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে গোবর্ধনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাঁকে সেখান থেকে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই সেই রাতে মৃত্যু হয় গোবর্ধনের।
ঘটনার পরের দিন নিহত যুবকের বাবা নেপাল মাজি ছাতনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজ করে গ্রেফতার করে। তদন্তেও তাদের বিরুদ্ধে খুনের প্রমাণ পায় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy