চেনা ছবি। পাল্টানোর প্রতীক্ষায় এলাকার মানুষ। (বাঁ দিকে) হিংলোয় কজওয়ে ভেসে গিয়ে আটকা পড়েছে ট্রাক। শাল নদীর কজওয়েতে বিপজ্জনক পারাপার। —ফাইল চিত্র।
বর্ষায় বেশি বৃষ্টি হলেই দু’টি কজওয়ে ছাপিয়ে বইতে থাকে জল। ডুবে যায় রাস্তা। ব্যাহত হয় যান চলাচল। আবার জল নেমে গেলেও বছরের অন্যান্য সময় সঙ্কীর্ণ দু’টি কজওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় দিনই ঘটে দুর্ঘটনা। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, খয়রাশোল ব্লকের শাল এবং হিংলো নদীতে উপর অবস্থিত ওই দুই জরাজীর্ণ কজওয়ে পারাপার করার অভিজ্ঞতা ঠিক কী, ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। দুর্ভোগ এড়াতে অতীতে বহু বার ভাসাপুল তৈরির দাবি উঠেছে। কিন্তু, কাজ হয়নি। এ বার সেই দুর্ভোগই ঘুচতে চলেছে। তৈরি হতে চলেছে নতুন সেতু। এমনটাই দাবি করছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ওই অংশের দায়িত্বে থাকা এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নীরজ সিংহ বলছেন, ‘‘সেতু দু’টির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। দু’টি সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬ কোটি টাকার বরাদ্দ মিলেছে। দরপত্রও ডাকা হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’ প্রসঙ্গত, জাতীয় সড়ক ঘোষিত হওয়ার আগেও এটিই ছিল আসানসোল থেকে সিউড়ি, খয়রাশোল এবং রাজনগরে আসার গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়ক। শুধু আসানসোল, রানিগঞ্জই নয়, পড়শি ঝাড়খণ্ড বা বিহার থেকে এই রাস্তা হয়ে মুর্শিদাবাদ, মালদা বা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তাও এটিই। ২০০৬ সালে ওই রাস্তা জাতীয় সড়কের তকমা পাওয়ায় গুরুত্ব আরও বেড়েছে। ফলে জলে ডুবে ভাসাপুল বন্ধ হয়ে গেলে দুর্ভোগের পরিধিটা কেমন হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
ঘটনা হল, জাতীয় সড়ক হওয়ার আগে রাজ্য সড়ক থাকাকালীনও সমস্যার মূলে ছিল পাণ্ডবেশ্বর পেরিয়ে অজয় এবং খয়রাশোলে থাকা শাল ও হিংলো নদীর সেতুগুলোই। ১৯৯৮ সালে অজয় সেতু তৈরি হলেও শাল ও হিংলো কজওয়ে দু’টির কোনও পরিবর্তন। এমনকী, জাতীয় সড়কের তকমা পেলেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। যে কারণে দুর্ভোগের অন্ত ছিল না এলাকাবাসীর। বিশেষ করে বর্ষায়। কেননা খয়রাশোল বা ঝাড়খণ্ডে বেশি বৃষ্টি হলেই উপচে ওঠে খয়রাশোলের হিংলো জলাধার। তখন হাজার হাজার কিউসেক জল ছাড়তে বাধ্য হয় সেচ দফতর। পরিণামে জাতীয় সড়কের মধ্যে থাকা খয়রাশোলের হিংলো নদীর কজওয়ে ভেসে যায়। জলে ডুবে যাওয়া রাস্তা ঠিকমতো ঠাওর করতে না পারলেও ঝুঁকি নিয়ে ওই কজওয়ে দিয়েই যেতে গিয়ে ফেঁসে যায় ভারী লরি বা অন্য যান। কেউ বা অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। এমন ঘটনা প্রতি বর্ষাতেই ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই কজওয়েতে জল উঠলে দু’দিকে যানজট হয়। আটকে পড়া মানুষ জন হয় পাশের হিংলো রেলসেতু দিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করেন, অন্যথা নির্ভর করতে হয় স্থানীয় কিছু যুবকের উপর। পয়সার বিনিময়ে ওই যুবকেরা নদী পারাপার করিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেন। সমস্যা মেটে না বর্ষার পরেও। এলাকাবাসীরা বলছেন, ‘‘এতই সংকীর্ণ দু’টি ভাসাপুল যে একটির বেশি দু’টি গাড়ির পাশাপাশি পার হওয়া সম্ভব ছিল না। মাঝে মধ্যেই গাড়ি ফেঁসে যান চলাচল বন্ধ থাকে। দুর্ঘটনাও ঘটে।’’
সমস্যা আরও বেড়েছে ২০১২ সাল থেকে। কারণ, শাল ও হিংলো নদীর সেতু দু’টির অবস্থার কোনও পরিবর্তন না করেই রানিগঞ্জ থেকে দুবরাজপুর পর্যন্ত জাতীয় সড়ক সংস্কার ও চওড়া করে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রতি নিয়ত যানবাহনের চাপ বেড়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলেও এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, সেতু দু’টি হোক। শুধু এলাকার মনুষই নন, সেতু দু’টি তৈরির দাবিতে স্থানীয় এক সন্ন্যাসী স্বামী সত্যানন্দ (পাঁচড়া গীতা ভবনের দায়িত্বে থাকা) গত সেপ্টেম্বরে খয়রাশোল থেকে সিউড়ি প্রশাসন ভবন পর্যন্ত পদযাত্রাও করেছিলেন। শ’দুয়েক মানুষ যোগ দিয়েছিলেন তাতে। তাঁর দাবি ছিল, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জাতীয় সড়ক। সেই রাস্তার উপরে এমন বেহাল সেতু থাকায় সমস্যা হয় প্রচুর মানুষের। বিশেষ করে যাঁরা প্রতি দিন রুজির জন্য ওই রস্তাদিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হন। সেই দাবিই অবশেষে পূরণ হতে চলেছে বলে খুশি স্বামী সত্যানন্দ। খুশি এলাকাবাসীও। তবে, এই বর্ষায় অবশ্য তাঁদের দুর্ভোগ ঘুচবে না।
এ দিকে, জাতীয় সড়কের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারও জানিয়েছেন, বর্ষার মধ্যে সেতু দু’টি করা সম্ভব নয়। তবে, এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক কাজগুলি অবশ্যই সেরে ফেলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy