এমনই যানজট লেগে থাকে কীর্ণাহারের চৌরাস্তা মোড়ে। —সোমনাথ মুস্তাফি
একেই যানজটে পা ফেলার উপায় নেই। তার উপরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ‘আন্ডার পাস’ নির্মাণের দাবি উড়িয়ে বসানো হয়েছে রেললাইন। এর ফলে নাভিশ্বাস ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
কীর্ণাহারে যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কীর্ণাহারের বুক চিরে চলে গিয়েছে সিউড়ি-কাটোয়া সড়ক। চৌমাথায় সেই সড়কের সঙ্গে একদিকে মিশেছে বোলপুর-কীর্ণাহার সড়ক, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি মিরাটি যাওয়ার রাস্তা। প্রায় সবসময়ই ওইসব রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে রবি এবং বুধবার রাস্তায় পা ফেলার জায়গা থাকে না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই দুইদিন রাস্তার দু’দিকে সব্জি হাট বসে। সেই হাটই এখন কার্যত নিত্যবাজারে পরিণত হয়েছে। তার উপরে গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাটও।
যানজট এড়াতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনওটিতেই জট কাটেনি।
কীর্ণাহার ১নং পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অমরনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কীর্ণাহারকে যানজট মুক্ত করার অন্যতম উপায় হল বাইপাস রাস্তা নির্মাণ। ২০০১ সালে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে রামকৃষ্ণপুর থেকে কালিকাপুর পর্যন্ত বাইপাস রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।’’ স্থানীয়দের দাবি, পরবর্তীকালে সব্জি হাট স্থানান্তরের জন্য স্থানীয় ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় ১০ ঘর সহ তিনটি বড়ো শেড তৈরি করে প্রশাসন। সম্প্রতি কর্মতীর্থ নামে আরও একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে তারই পাশে। কিন্তু সব্জি ব্যবসায়ীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এতে ভোগান্তিও ঘোচেনি!’’
বাইপাস রাস্তা হয়নি। সম্ভব হয়নি সব্জি ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর। এই অবস্থায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছ নির্মীয়মাণ ব্রডগেজ রেললাইনকে ঘিরে। চৌরাস্তা থেকে বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার রাস্তায় একসময় ছিল ‘ন্যারোগেজ’ রেলপথ। সেই রাস্তার উপর ছিল রেলগেটের মাধ্যমে যানবাহন এবং লোক চলাচল নিয়ন্ত্রিত হত। রেলগেট বন্ধ হলে দীর্ঘক্ষণ যানজটের কবলে পড়ত গোটা কীর্ণাহার। এখন ওই রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজ চলছে। স্থানীয় নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে রেলগেটের পরিবর্তে ‘আন্ডার পাসের’ দাবি জানানো হয়েছিল। তা গ্রাহ্য হয়নি বলে দাবি।
নাগরিক সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুবীর মণ্ডল, নাগরিক কমিটির সম্পাদক আশিস দে জানান, ‘‘ছোটলাইনে দুটি ট্রেন দিনে মাত্র ৬ বার যাতায়াত করত। তাতেই একবার গেট বন্ধ হলে যানজটে নাভিশ্বাস দেখা দিত। বড় লাইনে তো ঘন ঘন ট্রেন-মালগাড়ি যাতায়াত করবে। তখন ঘন ঘন গেট বন্ধ হলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এ জন্য আমরা রেলগেটের পরিবর্তে আন্ডার পাসের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি।’’
স্কুল শিক্ষক অরুণ রায়, বিশিষ্ট শোলাশিল্পী অনন্ত মালাকার জানান, সে সময় ওই রাস্তা পার হতে আধঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত। বড় লাইন হলে না জানি আরও কতক্ষণ আটকে থাকতে হবে যানজটে। কীর্ণাহার ১ নং পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান শিবরাম চট্টোপাধ্যায় জানান, বাইপাস রাস্তা নির্মাণই এই পরিস্থিতিতে যানজট মুক্তির অন্যতম উপায়। তাই আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আপাতত অ্যাম্বুল্যান্স জাতীয় ছোট গাড়ি চলাচলের উপযোগী একটি বাইপাস রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তীকালে সব ধরণের যানবাহন চলাচলের উপযোগী বাইপাস রাস্তা নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই প্রস্তাব অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy