খবরে নজর সিপিএম প্রার্থীর।
সেই কবে ভোট হয়েছে। আর তর সইছে না ওঁদের! ওঁরা সাঁইথিয়ার তিন মূর্তি— বিদায়ী বিধায়ক সিপিএম প্রার্থী ধীরেন বাগদি, শাসকদলের নতুন মুখ নীলাবতী সাহা এবং বিজেপি-র পিয়া সাহা। ফলের অধীর অপেক্ষায় তিন জনেই।
প্রথমে ধীরেনবাবুর কথাই বলা যাক— সর্বক্ষণের পার্টি কর্মী ধীরেনবাবু বা তাঁর পরিবারের কেউই ঘরের লোককে ভোট দিতে পারেননি। পারবেন কি করে? তাঁরা যে, মহম্মদবাজারের গনপুর অঞ্চলের গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা। এই এলাকা-সহ মহম্মদবাজারের ছ’টি অঞ্চল রামপুরহাট কেন্দ্রের অন্তর্গত। নিজের এলাকার ভোট ইভিএমে না যাওয়ায় চিন্তায় ধীরেনবাবু।
কেমন?
পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বছর তিনেকের নাতনি অর্পিতার (ধীরেনবাবু বুনি বলে ডাকেন) সঙ্গে মজা করা, খেলা করা ছিল দিনের প্রথম কাজ। অর্পিতাও দাদুর ঘাড়ে-পিঠে চেপে লাফাত। খেলত। আধো আধো কথায় নানা প্রশ্ন করে অস্থির করত। ভোটের চরম ব্যস্ততার মধ্যেও এই রুটিনের খুব একটা হেরফের হয়নি। বুনিকে আদর করে তবেই বেরোতেন প্রচারে! সেই দাদু এই ক’দিনে বিলকুল পাল্টে গিয়েছেন।
পরিবারের লোকেরাই বলছেন, যত দিন যাচ্ছে ধীরেনবাবুকে ততই যেন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। কিছুটা অস্থির। চোখে-মুখে তার স্পষ্ট ছাপ। শুক্রবার সকাল সাতটা হবে। চায়ের কাপ হাতে সবে টিভি খুলে বসেছেন। এমন সময় গুটি গুটি পায়ে পিছন থেকে গিয়ে আচমকা ঘাড়ে চেপে বসল বুনি। কিন্তু, কী কাণ্ড! ছোট্ট নাতনিকে আদর করে কোলে টানার বদলে বিরক্ত হলেন। পাশেই ছিলেন ধীরেনবাবুর ৮৫ বছরের বৃদ্ধ মা কাত্যায়নীদেবী। রকম সকম দেখে রীতিমতো ধমকে দিলেন ছেলেকে।
— আরে ওকে ধমকাচ্ছিস কেন? ও কি করল? বুঝি, ভোটের রেজাল্ট নিয়ে তুই দুশ্চিন্তা আছিস। আমরাও আছি। কিন্তু ওতো শিশু!
গল্পের বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী।
স্বামী-শাশুড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী মীরাদেবী। সায় দিলেন তিনিও। তারপরে যা বললেন তাতে বোঝা গেল চিন্তামুক্ত নন তিনিও। ততক্ষণে অবশ্য ভুল শুধরে বুনিকে আদর করে ফেলেছেন বর্ষীয়ান ধীরেনবাবু। এ বার বেরিয়ে পড়লেন গনপুরের দলীয় কার্যালয়ে উদ্দেশে। বলে গেলেন, ‘‘এখনও সারা দিন গনপুর আর মহম্মদবাজার দলীয় কার্যালয়েই কাটছে। পর্যালোচনা চলছে যে! কিন্তু, আর যেন তর সইছে না! ফলটা বের হলে বাঁচি।’’
তুলনায় কিছুটা চাপমুক্ত মনে হল তৃণমূল প্রার্থী নীলাবতী সাহাকে।
অন্য দিনের মতো এ দিনও সকাল সাড়ে ছ’টায় স্কুলে গিয়েছিলেন। সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফেরেন। হাত-মুখ ধুয়ে স্বামী দেবাশিসবাবুর (তৃণমূলের জেলা সম্পাদক) সঙ্গে বসে চা-মুড়ি খেতে খেতে গল্প করছিলেন। এমন সময় দেখলেন শাশুড়ি তরকারি কাটতে শুরু করেছেন! ওমনি শুরু বকাবকি। ‘‘মা (শাশুড়িকে) তোমাকে বলেছি না কুটনো কাটবে না। হাত কেটে গেলে কি হবে?’’ বলতে বলতে ঢুকলেন রান্নাঘরে। ভোট উপলক্ষে আসা দুই ননদ টিঙ্কু ও রিঙ্কু ততক্ষণে অর্ধেক রান্না সেরে ফেলেছেন। মাছটা হতে বাকি। মাকে জিজ্ঞাসা করে নিজের হাতে রুইপোস্ত রাঁধতে হাত দিলেন। স্নান সেরে চলল পুজোপাঠ।
আপনার টেনশন হচ্ছে না?
ঘরের কাজ সামলাতে সামলাতে নীলাবতীর জবাব, ‘‘কই না তো!’’ তা হলে প্রতিদিন দু’বেলা ঠাকুরের কাছে ধূপ-জল দিয়ে কী প্রার্থনা করা হয়? এ বার হেসে ফেললেন প্রার্থী। বললেন, ‘‘সত্যি বলতে কি টেনশন একটু হচ্ছেই। তবে সবার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছি, তাতে আমিই জিতছি।’’ জানাতে ভুললেন না— ‘‘সব থেকে বেশি ছটফটানি তো আমার স্বামীর!’’
এ দিকে, ‘‘দিদি চিন্তায় রয়েছেন’’— অকপটেই মেনে নিলেন পিয়াদেবীর নির্বাচনী এজেন্ট কাশীনাথ মণ্ডল। ভোটের প্রচারে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন বিজেপি-র এই প্রার্থী। জানা গেল, তাঁর জল বসন্ত হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরবন্দি।
ছবি : অনির্বাণ সেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy