Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নগদের আকালে টাকা মুটেদের অ্যাকাউন্টে

আর হাতেহাতে নয়। ঠেকায় পড়ে এ বার বাঁকুড়া শহরের মুটেমজদুরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা সরসারি জমা করবেন ঠিকাদারেরা। একমাস ধরে মজুরি না পেয়ে চাপে পড়ে যাওয়া মজুরদের সঙ্গে বসে ঠিকাদারেরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

আর হাতেহাতে নয়। ঠেকায় পড়ে এ বার বাঁকুড়া শহরের মুটেমজদুরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা সরসারি জমা করবেন ঠিকাদারেরা। একমাস ধরে মজুরি না পেয়ে চাপে পড়ে যাওয়া মজুরদের সঙ্গে বসে ঠিকাদারেরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ব্যাঙ্ক নগদ টাকা তোলার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ধার্য করে দিয়েছে কেন্দ্র। যদিও অনেক ব্যাঙ্কে তাও মিলছে না। আর এই সঙ্কটে মাথায় হাত পড়েছে বাঁকুড়া শহরের মুটেদের। কাজ করেও তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না। সমস্যা মেটাতে বৃহস্পতিবার উভয়পক্ষ আলোচনা করে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

মুটেদের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই শহরে প্রায় ৭০০ শ্রমিক লোডিং-আনলোডিং কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের অনেকেই রেলের গুডশেডে, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন গুদামে ঠিকাদারদের অধীনে কাজ করেন। নোট বাতিলের পরে প্রায় এক মাস ঠিকাদারদের কাছে এই শ্রমিকদের বকেয়া টাকার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা! শ্রমিকেরা কাজ করছেন, অথচ টাকা পাচ্ছেন না।

কেন পাচ্ছেন না? ঠিকাদারেরা জানাচ্ছেন, প্রতি সপ্তাহে কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজারের বেশি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলা যাচ্ছে না। অথচ শ্রমিকদের মজুরি দিতে তার কয়েক গুণ বেশি টাকার প্রয়োজন। মালিকপক্ষের এই সমস্যা বুঝে শ্রমিকেরাও এতদিন মুখ বুজেই টাকা বকেয়া রেখে কাজ করে গিয়েছেন। তবে এ বার বিকল্প পথ যে বাছতেই হবে তা টের পেয়েছেন শ্রমিকপক্ষ ও মালিকপক্ষ উভয়েই।

বাঁকুড়া স্টেশনের গুডশেডে ওই আলোচনায় ছিলেন আইএনটিটিইউসি-র শ্রমিক নেতা আখতার মণ্ডল, সিটু নেতা তপন দাস, সিটু-র জেলা সহ-সভাপতি প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ও। প্রতীপবাবু বলেন, “যা পরিস্থিতি তাতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরি না নিলে বকেয়া টাকার পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। কবে এই পরিস্থিতি ঠিক হবে তা জানা নেই।’’ তিনি জানান, বেশিরভাগ মুটে শ্রমিকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে এতদিন তাঁরা হাতে হাতে মজুরি নিতে অভ্যস্ত ছিলেন। তবে শ্রমিকদের কথা মেনে ঠিক হয়েছে, অন্তত দুশো টাকা পর্যন্ত মজুরি নগদে মেটানো হবে। তার বেশি হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে।’’

মুটে শ্রমিক ছটু দালাল, বরকত আলি খানেরা জানান, ব্যাঙ্কে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থাকলেও এতদিন বিশেষ লেনদেন করতেন না। এ বার ব্যাঙ্কে না যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও গতি তাঁরা দেখছেন না। আবার মুটে শ্রমিক উজ্বল বাউরি, সেখ সাহাবুদ্দিনদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নেই। তাঁরা বলেন, “ব্যাঙ্কে লেনদেন জটিলতা বলেই মনে হয়। তবে তবে যা অবস্থা, এবার দেখছি অ্যাকাউন্ট খুলতেই হবে।”

শুক্রবার ব্যবসায়ী বিনয় বাজোরিয়া জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ওই শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। আগামী সপ্তাহে সবার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।

সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক তৎপর হয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের নির্দেশিকা পেয়েছি। জেলার লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট খুলতে যা যা করার তা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

contractors workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE